Thursday, April 24, 2025
Homeলিড নিউজফরিদপুরে বাস উল্টে খাদে পড়ে বাবা-ছেলেসহ সাতজন নিহত 

ফরিদপুরে বাস উল্টে খাদে পড়ে বাবা-ছেলেসহ সাতজন নিহত 

সত্যপাঠ ডেস্ক

ফরিদপুরে বাস উল্টে খাদে পড়ে বাবা-ছেলেসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩২ জন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর সদরের গেরদা ইউনিয়নের বাখুন্ডা এলাকায় জোবায়দা করিম জুট মিলের উল্টো পাশে শরিফ জুট মিলের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনাকবলিত ফারাবী পরিবহনের বাসটি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুর আসছিল। আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে সড়কের পাশের একটি পিলারে ধাক্কা খেয়ে এটি পাশের খাদে পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ এখন পর্যন্ত ৭ জন নিহত ও ৩২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নিহতরা হলেন- ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের শেখরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জোয়ার সরদার (৬৫), তার ছেলে ইমান সরদার (৩৫), নগরকান্দার কাঠিয়া বড়গ্রামের বাসিন্দা রাজীব খানের স্ত্রী দীপা খান (৩৪), ফরিদপুর সদরের চর চাঁদপুর গ্রামের বলরাম সরকারের স্ত্রী ভারতি সরকার (৪০), চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীটেক গ্রামের বাসিন্দা খালেক চৌধুরীর ছেলে আলম চৌধুরী (৪০), ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার বাসিন্দা লতিফ ব্যাপারির স্ত্রী ফজিরন নেসা এবং লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব ফকিরপাড়া গ্রামের জহিরউদ্দিনের ছেলে আজিবরউদ্দিন (৪৩)।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত কয়েকজন যাত্রী জানিয়েছেন, বাসটি নগরকান্দা থেকে সকাল ১০টার কিছুক্ষণ পরে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। সাধারণত নগরকান্দা থেকে ফরিদপুর আসতে এসব বাসের এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। তবে নগরকান্দা থেকে তালমা ১২ কিলোমিটার সড়ক তুলনামূলক চাপা। এজন্য এই সড়কে বেশ স্বাভাবিকভাবে চালিয়েই আসছিলেন চালক। তবে বেপোরোয়া হয়ে ওঠেন ওই আঞ্চলিক সড়ক ছেড়ে যখন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ওঠেন। নগরকান্দার তালমার মোড় থেকে বাসটি মহাসড়কে ওঠে। তখনই বাসটি গতি বাড়াতে থাকে।

সেখান থেকে মহিলারোড এলাকায় আসলে বাসের গতি বাড়িয়ে অন্তত ৮০ কিলোমিটার বেগে চালান চালক। এ সময় বাসের ভেতরের যাত্রীরা চালককে নিষেধ করলেও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। বাসটি দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে এসে গতি আরও বাড়িয়ে সামনে একটি গাড়িকে দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে সড়কের পাশে একটি পিলারে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে যায়।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ওই বাসের যাত্রী বাধন সরকার (২৭) বলেন, একটা লোকাল বাস যে এত গতিতে চলতে পারে তা জীবনে দেখিনি। শুধুমাত্র দ্রুতগতির কারণেই আমাদের আজ (মঙ্গলবার) এই মৃত্যু, হাসপাতাল ও আহত দেখতে হলো।

তিনি বলেন, চালকের গতি দেখে আমরা বাসের ভেতর দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলেও তিনি আমাদের কথা শোনেননি।

ফরিদপুর দমকল বাহিনীর জ্যেষ্ঠ স্টেশন মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, বাসটি দ্রুত গতিতে এসে আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে সড়কের পাশের একটি পিলারে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় এবং রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন বাসের গতি ৮০ কিলোমিটারের বেশি ছিল। চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সঙ্গে সভা করা হবে। এভাবে অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, গাড়িটি দ্রুত গতির ছিল একই সঙ্গে আরেকটি দ্রুত গতির যানকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, নিহত প্রত্যেককে প্রশাসনের উদ্যোগে তাৎক্ষণিকভাবে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তিতে বিআরটিএর মাধ্যমে এককালীন অনুদান দেওয়া হবে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে। পরে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আলোচিত