Friday, May 2, 2025
Homeজাতীয়ভবদহ জলাবদ্ধতার চিরস্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিদর্শনে তিন...

ভবদহ জলাবদ্ধতার চিরস্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিদর্শনে তিন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

সত্যপাঠ রিপোর্ট

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা একটি স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সরকার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করছে। তবে সবার প্রচেষ্টায় এ বছর ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ভবদহ স্লুইসগেট পরিদর্শন শেষে ভবদহ মহাবিদ্যালয় কলেজ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ও সুধী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

 ভবদহ জলাবদ্ধতার চিরস্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিদর্শনে তিন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্থ ২০হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টর জমির পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়েছে। অতীতে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা সঠিক সদিচ্ছা দেখাননি। বর্তমান সরকার জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে। আমডাঙ্গা খাল, হরিভদ্রা ও আপার ভদ্রা খননের কাজ সেনাবাহিনী করবে।

তিনি বলেন, আমরা সবাই সজাগ আছি, যাতে এই অঞ্চলের মানুষকে আর দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। কৃষকদের বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এই এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণ আদায় বন্ধ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ। এখানে কিছু স্থানীয় সমস্যাও রয়েছে। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হরি নদীর চারপাশে গড়ে ওঠা ইট ভাটাগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, এই ইট ভাটাগুলো সরকারের নয়। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তার জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। বর্তমান সরকারের সময়ে ভবদহের স্থায়ী সমাধানের কাজ শুরু হবে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যা ২০০৫ সালে সহজেই সমাধান করা সম্ভব ছিল, কিন্তু সে সময় সরকারের সদিচ্ছার অভাব ছিল। বর্তমানে, সরকার সক্রিয়ভাবে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তিন উপদেষ্টা একত্রে ভবদহ পরিদর্শন করেছি যাতে জাতীয় নীতিনির্ধারণী মহলে ঐক্যমত্য গড়ে তোলা যায় এবং চিরস্থায়ী সমাধান বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।’

এছাড়া, উপদেষ্টারা ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে জানান, বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে এবং সর্বোত্তম সমাধান চূড়ান্ত করা হবে।

পরিদর্শনকালে তারা চলমান প্রকল্পসমূহ পর্যবেক্ষণ করেন এবং জলাবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ১০টায় নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করার পর, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভবদহের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন তারা। দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন এবং দুর্ভোগে পড়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় সেনাবাহিনীর প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানসমূহ পরিদর্শন ও মতামত গ্রহণ করা হয়। পরিদর্শন শেষে বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সুধীসমাজ ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টারা।

ভবদহ এলাকা অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর (যশোর) এবং ডুমুরিয়া ও ফুলতলা (খুলনা) উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। পলি পড়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে এই দুর্ভোগ সৃষ্টি ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত চার দশকে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। তারা দীর্ঘদিন ধরে   ‘টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম)’ চালু এবং আমডাঙ্গা খাল খননের দাবি জানিয়ে আসছেন।

ভবদহ সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, তিন উপদেষ্টার একসঙ্গে আগমন এবার আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রতিফলন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আগেও এসে কথা দিয়েছেন ভবদহের স্থায়ী সমাধানের। সেই ধারাবাহিকতায় আমডাঙ্গা খাল খননের টেন্ডার শুরু হয়েছে। আমাদের মূল দাবি ছিল সেচ পাম্প বন্ধ করে টিআরএম চালু করা। সেটিও এবার বাস্তবায়নের পথে।

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে যারা প্রকল্পের নামে লুটপাট করেছে, তাদের বিচার চাই। উপদেষ্টাদের মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করব।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান, উপদেষ্টাদের নির্দেশে ইতিমধ্যে কিছু পানিনিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়েছে। এবার কৃষি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও এসেছেন। আমরা কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, কৃষিঋণ মওকুফ এবং দুর্নীতির বিচার চাইছি।

উপদেষ্টাদের এমন সম্মিলিত পদক্ষেপে ভবদহবাসী এবার কার্যকর এবং টেকসই সমাধানের প্রত্যাশা করছে।

তবে উপদেষ্টাদের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিদর্শনের ঠিক আগমুহূর্তে, ভবদহে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) চালু করা নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। টিআরএম চালুর পক্ষে এবং বিপক্ষে দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে নিজ নিজ দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

জানা যায়, টিআরএম চালুর দাবিতে একটি পক্ষ দ্রুত এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে।

অন্যদিকে, টিআরএমের বিপক্ষে থাকা বিক্ষোভকারীরা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তাদের দাবি, টিআরএম চালু হলে এই অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য খাত মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে তারা নদী খননের ওপর জোর দিচ্ছেন।

টিআরএম বিরোধী আন্দোলন থাকা আসাদুজ্জামান বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলছেন, তাদের অধিকাংশই এই এলাকার ভুক্তভোগী নন। এই অঞ্চলে তাদের এক কাঠা জমিও নেই। শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা এই অযৌক্তিক দাবি করছেন।

’তবে অন্যপক্ষ বলছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন তারাই ভবদহের জলাবদ্ধতা দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয় জীবনযাত্রার মান এবং কৃষিকাজের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে আসছেন। সারাংশ এই উপদেষ্টাদের এমন উদ্যোগে ভবদহবাসীর প্রত্যাশা: মিলবে কার্যকর ও টেকসই সমাধান।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আলোচিত