বিশেষ প্রতিনিধি
দেশের স্থলবন্দর যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোলে ল্যাগেজ পাচার সিন্ডিকেটের দৌরাত্য থামছে না। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র অর্থলোভী কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্যদের সহায়তায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। সীমান্তে কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও সদস্যদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য আসছে। ল্যাগেজ সিন্ডিকেটের কারনে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
সীমান্ত সূত্রগুলো বলেছে, মাসুদ ওরফে বিজিবি মাসুদ, জিয়া, জনি শাহিন তরিকুল, সাঈদ, সালাউদ্দিনসহ ৮/১০ জন গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করছেন বেনাপোল আইসিপি ক্যাম্পে কর্মরত এক কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের রাজস্ব আদায়ের অন্যতম বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে দেদারসে আসছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ মালামাল। এ কাজে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি। অবৈধভাবে পাচার করে বিপুল পরিমাণ পণ্য নিয়ে আসা হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আনা বিদেশী মদ, ফেন্সিডিল, শাড়ী, কম্বল, কিসমিস, বিভিন্ন প্রকার চকলেট, জিলেট গার্ড ব্লেড, তৈরি পোশাক, জিরা, ঔষধ এবং বিভিন্ন প্রকার কসমেটিক্স আটক করে বেনাপোলে দায়িত্বরত বিজিবির বিশেষ টিম। এই টিমের প্রধান বেনাপোল আইসিপি ক্যাম্পের একজন কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, ল্যাগেজ পার্টির সদস্যরা কাস্টমস পার হয়ে আন্তর্জাতিক প্যাসেনজাার টার্মিনালে পৌছালে বিজিবির টেবিলের সামনে বেশির ভাগ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন বহুলালোচিত বিজিবির একজন চিহ্নিত কর্মকর্তা। এরপর সোর্সের সিগন্যাল পেলে ল্যাগেজ পার্টির কোন ব্যাগ তল্লাশী ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হয়। বিজিবির ম্যানেজ করতে ব্যাগ প্রতি ১০০০ টাকা নিয়ে থাকে। যারা টাকা দেয় না তাদেরকে নিয়ে নানা রকম হয়রানী শুরু করে।
চুক্তি না থাকায় এক পর্যায়ে ল্যাগেজসহ আইসিপি ক্যাম্পের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তল্লাশীর নামে মালামাল রেখে দেয়া হয় বলে যাতায়াতকারী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। কাচা টাকার গন্ধে সোর্স পরিচয় দেয়া মাসুদ, ওরফে বিজিবি মাসুদ, জিয়া, জনি, শাহীন, তরিকুল, সাঈদ, সালাউদ্দিনের কথায় বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে বিজিবি’র কতিপয় অর্থলোভী কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
সূত্র জানায়, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য নিয়ে আসার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হলেও বিজিবির দুর্নীতিবাজদের পকেটে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ। স্থল বন্দর বেনাপোলের আলোচিত ল্যাগেজ পার্টির সিন্ডিকেটের কারণে বিজিবি’র কর্মকর্তা ও সদস্যরা রাতারাতি বনে যাচ্ছে কোটিপতি। স্থানীয়দের দাবি বিজিবির সোর্স পরিচয় দেয়া বিতর্কিত, মাসুদ, ওরফে বিজিবি মাসুদ, জিয়া, জনি, শাহীন, তরিকুল, সাঈদ, সালাউদ্দিনসহ সংঘবদ্ধ কথিত বিজিবি’র সোর্সদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আনা হলে সরকার রাজস্ব আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
সূত্র জানায়, এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসব মালামাল আনে। ল্যাগেজ পার্টির দায়িত্ব হচ্ছে মাসুদ ওরফে বিজিবি মাসুদের। বিজিবির স্ক্যান মেশিন থেকে শুরু করে বাইরের টেবিল পর্যন্ত সব দায়িত্ব মাসুদের। যত অবৈধ পণ্য আসবে সবই মাসুদের নিয়ন্ত্রণে। অবৈধ পণ্য আসার পর মাসুদের গ্রীণ সিগনালের অপেক্ষায় থাকতে হয়। তার সিগনাল পেলেই পণ্য পাচার শুরু হয়।
মাসুদের এসব কাজের সহযোগী রয়েছে আরো ১০/১৫ জন। এদের তৎপরতা চলে বিজিবির সিসি ক্যামেরার মধ্যে। তারপরও অদৃশ্য কারণে তারা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া কাস্টমসের কারেন্ট মিস্ত্রি পরিচয় দানকারী সাঈদ হোসেন বর্ডারে কাস্টমসের সব লেনদেন করে। যেন সীমান্তে কাস্টমসের কাছ থেকে সাঈদ অবৈধ পণ্যের টাকা আদায়ের লিজ নিয়েছে। তরিকুল ওরফে বেনাপোল বিজিবি ক্যাম্প তরিকুলের মাধ্যমে এসএ পরিবহনে মালামাল লোড দিয়ে গন্তব্যে পাঠানো হয়। সে সবসময় পাচারকৃত মালামালের সাথেই থাকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ বিজিবির দায়িত্বরত সদস্যরা তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। তাদের দাবি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এদের পক্ষে থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে পকেট ভরছে। নগদা নারায়ণে তুষ্ট থাকায় বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ এই চক্রকে আটক করছেন না। সেই সাথে দুর্নীতিবাজ বহুলালোচিত ও চিহ্নিত বিজিবি’র কর্মকর্তাকে অবিলম্বে অপসারণ করলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ সম্ভব। তাহলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।