Friday, March 14, 2025
Homeআঞ্চলিকআগুনে সর্বস্ব হারানো দিনমজুর আজগর আলীর দিন কাটে অন্যের সহযোগিতায়

আগুনে সর্বস্ব হারানো দিনমজুর আজগর আলীর দিন কাটে অন্যের সহযোগিতায়

বাঘারপাড়া প্রতিনিধি

আজগর আলী মোল্লা (৪৩) পেশায় একজন দিনমজুর। সংসার চালাতে স্বামী-স্ত্রী মিলে অন্যের জমিতে কাজ করেন। তাও প্রতিদিন না। শারীরিক অসুস্থতার কারনে একদিন কাজ করে চার দিন বিশ্রাম নিতে হয় তাকে। পাঁচ শতক জমিতে খড়ের ছাউনি দিয়ে কোনোরকম ঘর তৈরি করে সেখানেই বসবাস করতেন দিনমজুর আজগর দম্পতি। এ ছাড়া তার আর কোনো জমি নেই। গবাদিপশু ও হাঁস মুরগী বিক্রি করে টেনেটুনে সংসারের চাকা সচল রেখেছিলেন। গত শনিবারের আগুনে তার সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন তিনি নিঃস্ব। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবারই এখন এদের ভরসা। বলছিলাম উপজেলার দোহাকুলা ইউনিয়নের খলশী গ্রামের আবু বক্কার মোল্লার ছেলে দিনমজুর আজগর আলীর দুর্দশার কথা।

সরেজমিনে গতকাল দুপুরে আজগর আলীর বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, স্ত্রী রীনা খাতুন (৩৫) কে নিয়ে পুড়ে যাওয়া আবর্জনা সরাচ্ছেন। এখনো সেখান থেকে পোড়াগন্ধ বেরোচ্ছে। কংক্রিটের খুঁটিগুলো দাড়িয়ে আছে। তার মধ্যে পোড়া বাঁশ, খড়, বাঁশের ঝুড়ি এলামেলো ছড়ানো ছিটানো। পাশে বেশ কয়েকটি ফল ও মেহগনির গাছ পাতাপোড়া অবস্থায় নিথর দাড়িয়ে আছে। পোড়াবাড়িতে প্রতিবেশীদের ভীড়। তারা বিভিন্ন পরামর্শ ও সান্তনা দিচ্ছেন আজগর আলীকে।

এসময় তিনি (আজগর) বলেন, স্ত্রীর আড়াই শতক ও নিজের নামের আড়াই শতক জমিতে একটি গোয়ালঘর, একটি রান্নাঘর ও একটি খড়ি রাখার ঘর করেছেন। সবগুলোই কংক্রিটের খুঁটির উপর খড়ের ছাউনি দেওয়া। স্বামী-স্ত্রী ৪’শ ও ৩’শ টাকার বিনিময়ে অন্যের জমিতে কাজ করেন। প্রতিদিন কাজ করতে পারেন না। গত ১০বছর ধরে শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস ও কোমরে ব্যথার কারনে একদিন কাজ করে চারদিন বিশ্রাম নিতে হয়। সংসার চালাতে গবাদিপশু ও হাঁসমুরগীর উপরও নির্ভর করতে হয় তাকে।

গত শনিবার (৮মার্চ) রাতে গোয়ালঘরে মশার কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এ দম্পতি। রাত সাড়ে দশটায় প্রতিবেশীদের চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে দেখেন সবঘরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুনে দুটো গরু (একটা এঁড়ে ও একটা বকনা), দুটো হাঁস, দুটো মুরগী মারা যায়। এছাড়াও নারিকেল, সফেদা, কামরাঙ্গা ও মেহগনি মিলে বারোটি গাছসহ চারটি ঘরও পুড়ে যায় আগুনে। পরনের কাপড় ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। চোখের সামনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস ও প্রতিবেশীদের চেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হলেও ঘরের কোনো কিছু বাঁচাতে পারেননি এ দম্পতি। শুধু প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে এখন বেঁচে আছে এ দম্পতি।

 দোহাকুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগুনে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে’।

বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন সরকার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটির পক্ষে একটি আবেদন পেয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে’।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আলোচিত