Friday, March 14, 2025
Homeআঞ্চলিকসরকারি হাসপাতাল থেকে, রোগী ভাগানোর তথ্য সংগ্রহ করার সময় , দুই সাংবাদিকের...

সরকারি হাসপাতাল থেকে, রোগী ভাগানোর তথ্য সংগ্রহ করার সময় , দুই সাংবাদিকের উপর ডাক্তারের হামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার তথ্য সংগ্রহ করার সময় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি ও দৈনিক কালবেলা প্রত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক গাজী ফরহাদ হোসেনের উপর হামলা চালিয়েছে এক ডাক্তার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।

শনিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের নারকেলতলা এলাকার বেসরকারি ক্লিনিক ট্রমা সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ডাক্তার হাফিজুল্লাহ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অর্থপেডিক্স সার্জারী কনসালটেন্ট এবং সাতক্ষীরা ট্রমা সেন্টারের পরিচালক। ডা. হাফিজউল্লাহ’র নেতৃত্বে ট্রমা সেন্টারের ম্যানেজার জনি, তার শ্যালক শরিফ,ক্লিনিক কর্মচারী আবু হুরাইয়া, আরিফ, হাবিবুর রহমান রনি, নূর নবী, আল-আমিনসহ অজ্ঞত নামা আরও ৪/৫ জন হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান কলেজের প্রভাষক আমিনুর রহমান জানান, ৮ মার্চ রাতে তারাবির নামাজ শেষে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রোগী ভালুকা চাঁদপুরের বাসিন্দা জুলেখা বেগমকে ট্রমা ক্লিনিকের দালালেরা চিকিৎসার বিভিন্ন কথা বলে ফুসলিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে আসে ট্রমা সেন্টারে। সেখানে সাংবাদিকরা একটি রোগীকে দেখতে গেলে সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী ভাঙানোর বিষয়টি উঠে আসে। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স সার্জন বিভাগের প্রধান ডাক্তার প্রবীর সরকারকে বিষয়টি আভিহত করা হলে বিষয়টি নিয়ে তিনি দূঃখ প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা ট্রমা সেন্টারের মালিক ডাক্তার হাফিজুল্লাহ তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন।

এ সময় ডাক্তার মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহর নেতৃত্বে তার ক্লিনিকের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও স্টাফরা ফিল্মি স্টাইলে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪ এর সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনি, দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক গাজী ফরহাদের উপর হামলা করে গুরুতর আহত করে। এ সময় সাংবাদিক মনির পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে ও মোবাইলের অডিও ডিভাইস কেড়ে নেয়। তথ্য সংগ্রহ করার সময় ডাক্তারের নেতৃত্বে এমন মারপিটের ঘটনা নেওয়া যায় না।

হামলার শিকার সাংবাদিক গাজী ফরহাদ ও মনিরুল ইসলাম মনি জানান, তারাবির নামাজ শেষে সাংবাদিক সংকর্মীদের সাথে ট্রমা সেন্টারে ভর্তি রোগী তালা উপজেলার একটি সেমাই কারখানায় দূর্ঘটনায় দেহ থেকে হাত বিচ্ছিন্ন নারী শ্রমিক ছাবিনা খাতুনের দেখতে যাই। রোগী দেখে বাইরে বের হয়ে দেখি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের রোগী জুলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধ মহিলা ভ্যানের উপরে শুয়ে তার পায়ে ব্যাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এ সময় আমরা তাদের কাছে জানতে চাইলাম কি হয়েছে? রোগীর সজনরা জানায় তারা ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিল, কিন্তু তিন দিনেও কোন চিকিৎসা না পেয়ে মেডিকেল হাসপাতালের লোকজনের পরামর্শে ট্রমা সেন্টার ডা. হাফিজুল্লাহর কাছে এসছেন তারা।

এসময় সাংবাদিকরা জানান ডা. হাফিজুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স সার্জন তাহলে সেখানেই দেখাতে পারতেন। মেডিকেলেতো ভাল চিকিৎসা হয়। এ সময় তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে তারা আকুতি মিনতি করে। এক পর্যায়ে সাংবাদিক মনি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জারীর বিভাগের প্রধান ডাক্তার প্রবীর সরকারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন।

রোগীর চিকিৎসা না পাওয়াসহ হাসপাতালের লোকজনের পরামর্শে রোগী বাইরে পাঠানোর বিষয়টি তাকে অবগত করি। প্রবীর সরকার জানান এর আগেও ডাক্তার হাফিজুল্লাহর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আশায় তাকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি ভুক্তভোগী রোগীদের পুনরায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন এবং রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলেন। এসব ঘটনার এক পর্যায়ে হঠাৎ ডা. হাফিজুল্লাহসহ ও তার ক্লিনিকের লোকজন আমাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। উপস্থিত দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক গাজী ফরহাদসহ অন্যান্য সাংবাদিক সহকর্মীরা ঠেকাতে গেলে তাদের উপরেও চড়াও হয় এবং তাদের উপর হামলা করে।

ভুক্তভোগী সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর এলাকার জুলেখা বেগমের ছেলে ইশার আলী গাজী জানান, আমার আম্মা কয়েক দিন ধরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তবে কয়েক দিন ধরে কোন প্রকার চিকিৎসা পাচ্ছিল না। আজ হাসপাতালে লোকজন আমাদেরকে বলে চিকিৎসা পেতে হলে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যেতে। তাই আমরা আমার বাবার ভ্যানে করে মাকে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাই।

তিনি বলেন, ট্রমা সেন্টারের সামনে আসার পরে আমার মায়ের কান্নাকাটি দেখে সাংবাদিক ভাই এগিয়ে আসে। আমরা সব ঘটনা খুলে বললে তিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বড় ডাক্তারের কাছে কল দেয়ে। বড় ডাক্তার তার মোবাইল থেকে কথা বলে পুনরায় মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে। আমরা সেজন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ট্রমা সেন্টারের ডাক্তার ও তার লোকজন সাংবাদিক ভাইয়ের উপর আক্রমণ করে। তারা ট্রমা সেন্টারের সামনের গেট বন্ধ করে সাংবাদিক ভাইকে বেধড়ক মারপিট করে।

রোগীর আরেক স্বজন কাজল বেগম বলেন, আমরা সব ঘটনা বলে সাংবাদিক ভাইয়ের সাহায্য চাই। কিন্তু ট্রমা সেন্টারের ডাক্তার সহ তাদের লোকজন সাংবাদিক ভাই আমাদের সহযোগিতা করায় তাকে ব্যাপক মারপিট করেছে। মারপিট দেখে আমি ও আমার খালা ঠেকাতে গেলে তারা আমাদের উপরও মারপিট করে।

এ ঘটনায় সাংবাদিকরা পুলিশকে খবর দিলে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ওই রাতেই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনি।

সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শামিনুল হক জানান, খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনি ডা. হাফিজুল্লাহ, তার ম্যানেজার জনিসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এদিকে এঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্ত ডা. হাফিজুল্লাহ’র অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পাটকেলঘাটা ও তালা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আলোচিত