Friday, March 14, 2025
Homeআঞ্চলিকসাতক্ষীরা ব্রাদার্স মটরস্’র নাহিদের খপ্পরে নিঃস্ব কয়েকটি পরিবার

সাতক্ষীরা ব্রাদার্স মটরস্’র নাহিদের খপ্পরে নিঃস্ব কয়েকটি পরিবার

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা শহরের ব্রাদার্স মটরস্ এর মালিক ও মাগুরা বৌবাজার এলাকার মৃত শেখ শফিকুল ইসলামের ছেলে প্রতারক নাহিদুল ইসলাম নাহিদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েকটি পরিবার।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী সদরের তালতলা গ্রামের মৃত সুজাউদ্দিন দালালের ছেলে রবিউল ইসলাম জানান, তার একটি স্যানিটারী সামগ্রীর দোকান আছে। দোকানের প্রয়োজনে নাহিদের নিকট থেকে ৫ লক্ষ টাকা ধার হিসেবে নেন। ধার পরিশোধ করতে গেলে নাহিদ বলে টাকা পয়সা কোন বিষয় না। প্রয়োজনে চেক স্ট্যাম্প নিয়ে আসলে বিনা লাভে টাকা দিতে পারবো। নাহিদের এমন কথায় ভুক্তভোগী রবিউল আশার আলো খুঁজে পেলেও এই টাকা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

এর কিছুদিন পর সে নাহিদের কাছ থেকে ফাঁকা চেক স্ট্যাম্প দিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা ধার নেয়। সে সময় কথা ছিল নাম মাত্র একটা লাভ দিলে হবে। রবিউলও মাসে মাসে তাকে একটা লভ্যাংশ দেয়। তবে বিপত্তি বাধে নাহিদের মামা আওয়মীলীগ নেতা কাজী ফিরোজ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক হওয়ার পরে। সে তার মামার ক্ষমতা বলে আসল ৫ লক্ষ টাকা ও সুদ ২১ লক্ষ টাকা দাবি করে। না দিলে ফাকা চেক স্ট্যাম্প দিয়ে কোটি টাকার মামলা দিবে বলে জানিয়ে দেয়। ভুক্তভোগী রবিউল কোন কুল কিনারা খুজে না পেয়ে সে তার শ্বশুর বাড়ির জমি বিক্রি করে মোট ২৬ লক্ষ টাকা দিয়ে সে তার চেক স্ট্যাম্প ফিরিয়ে নেয়।

আরো এক ভুক্তভোগী সদরের ফিংড়ী ইউনিয়নের বালিথা গ্রামের শিবু দাসের ছেলে পশু চিকিৎসক বাপ্পি দাস জানান, প্রতারক নাহিদুলের খপ্পরে পরে বর্তমানে সে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে আছে। বাপ্পি দাস আরো জানান, একটি মোটর সাইকেল ক্রয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় নাহিদের সাথে। সেখান থেকে নাহিদের থেকে দেড় লক্ষ টাকা দামে একটি পালসার মোটর সাইকেল ক্রয় করি। সময় মত টাকা না দিতে পারায় তার পরিবারের অজান্তে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার জমি চেক স্ট্যাম্পের ভয় দেখিয়ে তার মামার প্রভাবে নাহিদ নিজের নামে লিখে নেয়।

এদিকে, তার প্রতারনার খপ্পর থেকে রক্ষা পায়নি তার আপন ভায়রা ভাই (শ্যালিকার স্বামী) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বাধঘাটা গ্রামের মাজেদ দফাদারের ছেলে সাইদুল ইসলাম। সাইদুল এ প্রতিনিধিকে জানান, আমি ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালিয়ে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় শ্বশুর বাড়ি এলাকায় ৫ শতক জমি ক্রয় করি। নাহিদের মাদক মামলায় ৩২ বছর সাজা হওয়ার পরে আমাকে তার স্ত্রী বিলকিস আমাকে শো-রুমের দ্বায়িত্ব নিতে বলে। আমি দায়িত্ব নিয়ে শো-রুমের দেখভাল করতে থাকি।

নাহিদ ফিরে এসে আমাকে ফাঁদে ফেলে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সারাজীবনের জমানো টাকায় কেনা জমিটি কৌশলে তার স্ত্রী বিলকিসের নামে লিখে নেয় এবং পরবর্তীতে আমার স্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে আমাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে। বর্তমানে আমি শিশু পুত্রকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।

আর এক ভুক্তভোগী সালাউদ্দীন বলেন, জীবিকার তাগিদে বিগত কয়েক বছর পূর্বে শহরের কাটিয়া “ব্রাদার্স মটরস্” নামক রিকন্ডিশন মোটর সাইকেল শোরুমে মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতনের চুক্তিতে কর্মচারী হিসেবে যোগদান করি। কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানটির মালিক সুদখোর হিসেবে পরিচিত শেখ নাহিদুল ইসলাম নাহিদ একটি মাদক মামলায় ৩২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যান। তিনি জেল হাজতে থাকাকালিন তার ১ম স্ত্রী বিলকিস খাতুন তাকে ছাড়াতে এবং মামলা মিটানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করতে থাকে। তার কাছে টাকা না থাকায় তৎকালীন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও নেতাদের কাছে গেলেও কোন টাকা জোগাড় করতে পারেননি।

পরবর্তীতে শোরুম মালিকের বিপদের কথা মাথায় রেখে আমার মাধ্যমে প্রিয়ংকর মন্ডলের নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা, প্রকাশ মন্ডলের নিকট থেকে ২ লক্ষ টাকা, গাজী পার্টসের মালিকের নিকট থেকে একটি চেক নিয়ে অন্য ব্যবসায়ী সোহাগের থেকে ১ লক্ষ টাকা, প্রিয়ংকর মন্ডলের নিকট থেকে আমার নাম করে আরো ২ লক্ষ টাকা তুলে দিই বিলকিস খাতুনের কাছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ী আমাকে জামিনদার হিসেবে তাকে টাকা ঋণ দিয়েছিল। কথা ছিল তার স্বামী নাহিদ জেল থেকে বের হলে টাকা পরিশোধ করবে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে দিয়েছি বিলকিসের কাছে। কিন্তু নাহিদ জামিনে বের হয়ে ওই টাকা পরিশোধ না করে উল্টো আমাকে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এখন আমি সমিতির কিস্তি টানতে হিমশিম খাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, ওই টাকা চাইতে গেলে নাহিদ বলে যার কাছে টাকা দিয়েছ, তার কাছ থেকেই টাকা নাও। আমি বিলকিস খাতুনের কাছে টাকা চাইতে গেলে তালবাহানা করতে থাকে এবং টাকা না দিয়ে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি প্রদর্শন করে। শোরুমের লোনের জন্য নাহিদ এর গ্রান্টার হিসেবে আমার নামীয় এবং আমার স্ত্রীর নামীয় ফাঁকা চেক এবং স্ট্যাম্প জমা দেওয়া ছিলো। ওই চেক এবং স্ট্যাম্প ব্যবহার করে আমাদের বিপদে ফেলানোর চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে নাহিদ ও তার স্ত্রী বিলকিস। আমি একজন সামান্য কর্মচারী নিজে ঋণ না করেও ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। অন্যদিকে শোরুম মালিকের ষড়যন্ত্রের ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

এদিকে সালাউদ্দীন গাজী, নাহিদ ও তার স্ত্রী বিলকিসের কাছ থেকে টাকা ফেরত পেতে সাতক্ষীরা সদর থানা ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান।

এ ব্যাপারে নাহিদ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আলোচিত