Friday, March 14, 2025
Homeঅর্থনীতিদাম পেয়ে খুশি ফুল চাষীরা , চলতি মৌসুমে দেড়শ কোটি টাকার...

দাম পেয়ে খুশি ফুল চাষীরা , চলতি মৌসুমে দেড়শ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট 

 জমজমাট  গদখালীর ফুল বাজার

মোকাদ্দেছুর রহমান রকি

আজ ২১ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে মৌসুমের শেষ বাজারে ফুলের ভালো দাম পেয়েছেন দেশের ফুলের রাজধানী নামে খ্যাত যশোরের গদখালীর ফুল চাষীরা। বৃহস্পতিবার থেকে গাঁদা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুল বাড়তি দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি তারা। চাষীদের দাবি সারা বছরের হিসেবে বেশ লাভেই আছেন তারা। চাষী ও ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি পুরো মৌসুমে তারা দেড়শ’ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছেন।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে জমে উঠেছে যশোরের ফুলের বাজার। মৌসুমের শেষ উৎসবের শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় চরম ব্যস্ততায় রয়েছে চাষীরা। বৃহস্পতিবার বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ব্যবহৃত গাঁদা, গ্লাডিওলাস, রজনিগন্ধা, জিপসি ও কামিনী পাতা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন যানবাহনে তাদের কাছে ছুটে আসছে ফুল প্রেমীকারা ও পাইকারী এবং খুচরা বিক্রেতারা।

ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালীর ফুল চাষীরা মূলত বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, ইংরেজি নববর্ষ, বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে সারা বছরের বেচাকেনা করে থাকেন। মৌসুমের শেষ উৎসবের বেচাকেনা বৃস্পতিবার শেষ করছেন তারা। গত তিনদিন ধরে ফুলের উর্ধ্বমুখী দাম পেয়ে খুশি চাষীরা। তাদের দাবি দুই সপ্তাহ আগে যে গ্লাডিওলাস পানির দামে বিক্রি করছিলেন তা এখন ৮ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। প্রতিহাজার ৩০০ টাকা মূল্যের গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা দামে, জিপসি ও কামিনি পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা, জারবেরা ৭/৮ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২/৩ টাকা। তবে দাম নিম্নমুখী থাকায় মুখে হাসি নেই গোলাপ চাষীদের মুখে। চাষীদের দাবি তারপরও সারা বছরের হিসেবে বেশ লাভেই আছেন তারা।

ফুল চাষী আব্দুস সামাদ সাংবাদিকদের জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি বাজার ভালো যাওয়ায় আমরা খুশি। আজ গাঁদা ফুল সর্বোচ্চ ১৩শ’ টাকা হাজার বিক্রি করেছি। গত তিনদিন ধরে গাঁদা, গ্লাডিওলাসের দাম ভিলো যাচ্ছে।

শুকুর আলী নামে অপর এক চাষী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি ৮ কাটা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ হয়েছে ৫হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি। এছাড়া এক বিঘা গোলাপ চাষ ছিলো। এবছর কাঙ্খিত দাম না পেলেও খরচ উঠে লাভে আছি।

জালাল উদ্দিন নামে আরো এক চাষী বলেন, এবছর ১ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস চাষ করেছিলাম। শীতের মধ্যে হঠাৎ গরম পড়ায় প্রচুর ফুল ফুটে যিয়। যে কারণে শুরুতে এ ফুল পানির দরে বিক্রি করতে হয়েছে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারির বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। গত তিনদিন ধরে এ ফুল কালার ভেদে ৮ থেকে ১৫/১৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আজও ৮ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এর বাইরে জিপসি ফুল ও কামিনী পাতার ভালো দাম পেয়েছি। সারা বছরের হিসাব মিলালে লাভে থাকবো।

রিপন আলী নামে এক চাষী সাংবাদিকদের বলেন, আমার ২ বিঘা গোলাপের চাষ রয়েছে। এমৌসুমে অ্যাভারেজ দাম পেয়েছি। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে গত বছর যে ফুল ২৫টাকা পিস বিক্রি করেছি তা এ বছর ১০/১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি বাজারে তা নেমে ৩/৪ টাকায় এসেছে। তারপরও সারা বছরের হিসেবে লোকসান হবে না।

মঞ্জুর হোসেন নামে অপর এক চাষী বলেন, আমরা মূলত উৎসব কেন্দ্রিক ব্যবসা করি। ২০ ফেব্রুয়ারী শেষ উৎসবের শেষ বাজার। ভালো দাম পেয়েছি। এ বছর ৮ বিঘা জমিতে জারবেরা, গোলাপ, গাদা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ করেছি। সব মিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করেছি। খরচ বাদ ৬ লাখ টাকা লাভ হবে। এদিকে গদখালী ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ২১ফেব্রুয়ারির বাজারে চাহিদামত দাম পেয়েছেন ফুল চাষীরা।

গত তিনদিন ধরেই বাজার চড়া। আশানুরূপ দাম পাওয়ায় চাষীরা খুশি। তিনি আরো বলেন, আমাদের উৎসব কেন্দ্রিক ফুল ব্যববসার মৌসুম শেষ হচ্ছে। গত ডিসেম্বর থেকে অদ্যাবধি পুরো মৌসুমে অন্তত দেড়শ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছন চাষীরা। তবে এটা গত মৌসুমের তুলনায় কম। তারপরও চাষীরা লাভেই থাকবেন বলে আশাবাদী। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরের প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১৩ ধরণের ফুলের চাষ হয়। এবং এ ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক লোক জড়িত।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আলোচিত