সত্যপাঠ রিপোর্ট
যশোরে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রোগি ও তার স্বজনদের সাথে চরম দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার এ ধরনের ব্যবহারে রোগি ও তার সজনরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। এমন ঘটনায় চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানিয়েছে রোগি ও তাদের স্বজনরা।
জানা গেছে, যশোর শহরের গরিব শাহ সড়কের ফাতেমা হাসপাতালের সামনের গলিতে ‘যশোর ই.এন.টি কেয়ার এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ খুলে বসেছেন নাক কান গলা চিকিৎসক সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার ভিজিটিং কার্ড অনুযায়ী তিনি এখানে নিয়মিত রোগি দেখেন। রোগি প্রতি প্রথমে ৭০০ টাকা ফি গ্রহণ করেন। দ্বিতীয়বার রোগি প্রতি ৫০০ টাকা নেন। এক মাস পার হলে আবারও নতুন রোগি হিসেবে ৭০০ টাকা করে নেন।
প্রথমবার চিকিৎসা গ্রহণ করলে পরবর্তীতে তার নামের ফোল্ডার ছাড়া তিনি কোন রোগি দেখেন না। সেই সাথে দুর্ব্যবহারও করেন রোগী ও তার স্বজনদের সাথে। এছাড়া প্রেসক্রিপশন ভাঁজ, ময়লা, ছেড়া হলেও কোন রোগি দেখেন না তিনি। কোন রোগি ফোল্ডার ছাড়া গেলে তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন।
ফোল্ডার না থাকায় শনিবার বিকালে শহরের লোহাপট্টি এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান হোসেন তার বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য গেলে তাদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। ডাক্তার সালাহউদ্দিন ওই রোগির সাথে ফোল্ডার ও প্রেসক্রিপশন ভাজ থাকার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তার এমন ব্যবহারে রোগি ও তার স্বজন শাহজাহান হোসেন হতভম্ব হয়ে পড়েন।
রোগির স্বজন শাহজাহান হোসেন জানান, ডাক্তার সালাহউদ্দিন আহমেদের এক সময় লোহাপট্টিতে চেম্বার ছিল। সেই সুবাদে তার কাছে আমি আমার বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য যায়। কিন্তু তার ব্যবহারে আমি ও আমার বাবা হতভম্ব হয়ে পড়ি। একজন চিকিৎসকের এমন ব্যবহার কোন মানুষ আশা করেন না। তার চেয়ে কসাইরা ভালো ব্যবহার করে।
ডাক্তার জোর গলায় জানিয়ে দেন ফোল্ডার নিয়ে তারপরে চিকিৎসা নিতে আসবেন। তারপর আমি আমার বাবাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক দোকানি বলেন, ডা. সালাহউদ্দিন আহমেদের ব্যবহার খুবই খারাপ। এমন অভিযোগ অনেকেই করে। তার ব্যবহারে কারণে লোহাপট্টিতে ঠাঁপ খেয়ে এখানে এসে চেম্বার খুলে বসেন।
শহিদুল ইসলাম নামে এক রোগির স্বজন বলেন, দুই মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি। রোগি ভালো হচ্ছে না। ডাক্তার ফি নিয়েই যাচ্ছে। কত দিন লাগবে ভালো হতে আল্লাহ জানে।
আসলাম হোসেন নামে এক রোগির স্বজন বলেন, তার রোগির সাথেও খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। শুধুমাত্র মহিলা রোগি আসলে তার সাথে একটু ভালো ব্যবহার করেন। সুন্দর করে কথা বলেন। এ সময় তার চরিত্র সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
একটি সূত্র জানায়, ডাক্তার সালাহউদ্দিন এক সময় শহরের লোহাপট্টিতে চেম্বার ছিলো। এখানে এক রোগির ভুল চিকিৎসার কারণে চরম মারপিটের শিকার হন। সেসময় এ নিয়ে থানা পুলিশ হয়। সে সময় মোটা অংকের অর্থ দিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পান সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপর বেশ কিছু দিন তার চেম্বার বন্ধ রাখতে হয়।
পরে যশোর থেকে বিতাড়িত হয়ে ঢাকায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে রোগি দেখা শুরু করেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হলে আবারও যশোর ফিরে আসেন। এসে লোহাপট্টির চেম্বার পরিবর্তন করে শহরের মশিউর রহমান সড়কের ফাতেমা হাসপাতালের সামনে আবারও চিকিৎসা ব্যবসা গড়ে তোলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য ডাক্তার সালাহউদ্দিন আহমেদের চেম্বারের ০১৭২৬১১৫৫৭৭ নম্বার মোবাইল ফোনে ফোন করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বক্তব্য জানান জন্য ফোন নম্বর চাওয়া হলে রোহান নামে একজন বলেন, কি অভিযোগ আগে বলেন। তারপর জেনে ডাক্তারকে জানানো হবে। এরপর ডাক্তারের সাথে আপনার কথা বলে দেওয়া হবে। অভিযোগ বলা হলে তিনি উল্টো পত্রিকার নাম ও সম্পাদকের নাম জানতে চান। এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
ডাক্তার সালাহ উদ্দিন সম্পর্কে জানার জন্য যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, ডাক্তারের বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।