প্রেস বিজ্ঞপ্তি
মঙ্গলবার দুপুর ৩ টায় যশোর কালেক্টরেট চত্বরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসান চৌধুরী নিকট মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলন, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন, কপোতাক্ষ নদ বাঁচাও আন্দোলন, চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের এক যৌথ প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি প্রদান করে।
স্মারক লিপি প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জিল্লুর রহমান ভিটু, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা তসলিম উর রহমান, কপোতক্ষ নদ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রহিম, মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলনের আব্দুস শুকুর, সাহবুদ্দিন বাটুল, চিত্রা বাঁচাও আন্দোলনের পলাশ বিশ্বাস, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ।
মুক্তেশ্বরী নদ দখল করে হাসপাতালের নামে বহুতল ভবন, সেতু অবিলম্বে উচ্ছেদ, ভবদহ সমস্যা সমাধানে উজানে নদী সংযোগ, বর্ষা মৌসুমের আগেই টিআরএম চালু, নদী খনন, সুইচ গেট সমুহ রিপিয়ার করে উন্মুক্ত করা, দ্রুত আমডাঙা খাল প্রকল্প শুরু করা, ভৈরব কপোতাক্ষ নদ সহ সকল নদী থেকে অবৈদ দখলদার উচ্ছে, পাটা নেট বাঁধ উচ্ছেদ, ঘের নীতিমালা কে মেনে ঘের ব্যবসা বাস্তবায়নের উদ্যোগের দাবি স্মারকলিপি তে উল্লেখ করা হয়।
স্মারকলিপি উল্লেখ করা হয়,
মুক্তেশ্বরী নদী ভৈরব নদের শাখা। এর নিম্ন প্রবাহ হরি, শ্রী, তেলিগাতী, গ্যাংরাইল নামে বারো আউরিয়া মোহনায় মিলিত হয়ে রূপসা-শিবসা ধারায় মিলিত হয়ে সাগরে পড়েছে। এই নদীর উজানে ভৈরবের পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় নদীর উৎস থেকে চৌগাছা-যশোর রোডে সলুয়া বাজার পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে এবং যশোর সদরের পুলেরহাট পর্যন্ত অবৈধ দখলদারের দৌরাত্ম ও ব্রিজের নামে কালভার্ট নির্মাণ করে নদীকে হত্যা করা হয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের নামে নদী তট আইন লঙ্ঘন শুধু নয়, নদীগর্ভ দখল ও ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেছে। এর বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদকে তারা তোয়াক্কা করেনি। বর্তমানে নদীর উপর দুই পাড় কংক্রিট ঢালাই করে সংকীর্ণ কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। যা ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে পাউবো, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও নদী রক্ষা কমিশনের কোন ভূমিকা নেই। নদীর উপর এই হস্তক্ষেপে যশোর সেনানিবাসও জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হবে।
অপরদিকে, ভবদহ সংকটাপন্ন এলাকার সমস্যা সমাধানে সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাধাগ্রস্থ হয়ে নতুন সংকটের জন্ম দেবে। ফলে এই অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও মুক্তেশ্বরী নদী সংস্কার ও ভৈরবের সাথে নদী সংযোগ জরুরি। যা ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের পথ করে দেবে।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর ভবদহ সমস্যার সমাধানে আমডাঙ্গা খাল সংস্কার ও টিআরএম প্রকল্প চালু করার জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতি আমরা এই জনপদের মানুষের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি ও সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দ্রুততম সময়ের ভিতর এখনই যে কোনো একটি বিলে পলি ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে পর্যায়ক্রমে বিলসমূহে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। সংশ্লিষ্ট বিলে ভূমিহীন, মৎস্যজীবী, ভূমি মালিক, ঘের মালিকদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার বিষয়টি যত্নের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।
আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের কাজ দ্রুত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে নদী ড্রেজিং করা, ২১, ৯, ৬, ৩ ভেন্টের সকল স্লুইস গেট সংস্কার ও সচল করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই নদী অববাহিকায় জলাবদ্ধ ১ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ফসল হয়নি প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে। এবং কোন জমিই জনগণের নিজস্ব সেচ ব্যবস্থা ছাড়া চাষ উপযোগী করা যায়নি। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রকৃত তথ্য গোপন করে সরকারকে বিভ্রান্ত করেছে। উল্লেখ্য যে, বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও কায়েমী মহলের স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষ ২১ ভেন্টের সকল স্লুইস গেট বন্ধ রেখে পাম্পের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প নদীকে মোহনা পর্যন্ত ভরাট করে ফেলেছে।
পাউবো’র বর্তমান কর্মকর্তা সেই অপকর্মকে জায়েজ করার জন্য সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশিত ‘জরুরি নদী খনন’ কাজ নয়ছয় করে বানচাল করেছে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই- বর্ষার আগেই ২ মাসের মধ্যে নদীর প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করা সম্ভব। ওই জনপদে ঘের ব্যবসায়ীরা সরকারি নীতিমালাকে উপেক্ষা করে ঘের ব্যবসা করে আসছে। সরকারি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা রাখছে না।
ভৈরব নদ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রধান নদী প্রবাহ- এই জনপদের প্রাণ ভোমরা। এর সাথে যুক্ত চিত্রা, কপোতাক্ষ, হরিহর, বেতনাসহ শাখা নদী ও খালসমূহ। ভৈরব-মাথাভাঙা নদী সংযোগ দিয়ে এর প্রবাহমানতা বজায় রাখতে পারলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী, পানি ব্যবস্থাপনার পুনর্জাগরন ঘটবে, সুন্দরবন রক্ষা, মোংলা পোর্টের নাব্যতার সমস্যা, জলাবদ্ধতা, সমুদ্র উপকূলীয় সমস্যা ও নদী পানি ব্যবস্থাপনা, প্রাণ-প্রকৃতি, জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।
২০২০ সালে পাউবো পক্ষ থেকে আইডব্লিউএম জরিপ করে নদী সংযোগ প্রকল্প প্রস্তাব করে। যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে আমাদেরকে অবহিত করা হয়। ইতিমধ্যে কপোতাক্ষ ও ভৈরব-আপার ভৈরব সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সংস্কারকৃত আপার ভৈরব থেকে প্রস্তাবিত ভৈরব-মাথাভাঙা সংযোগ স্থলের দূরত্ব মাত্র ১২/১৩ কিলোমিটার। এ সংযোগ সম্পাদন করা গেলে কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, ঢাকার উপর বন্যার চাপ কমবে এই পানি ভৈরব দিয়ে প্রবাহিত হতে পারলে নিম্নাঞ্চলে সরকারের সংস্কার বাবদ খরচ সাশ্রয় হবে। শাখা নদীসমূহ সচল হবে।
কপোতাক্ষ নদ, আপার ভৈরব ও ভৈরব নদ সংস্কার করা হয়েছে। যদিও সংস্কার কাজে নানা অনিয়ম, নদী তট আইন না মানা, নদী গর্ভে মাটি রাখা ইত্যাদি অভিযোগ উত্তাপিত হলেও তা কর্ণপাত করা হয়নি। বর্তমানে নেট-পাটা দিয়ে কচুরিপানায় নদীকে বদ্ধ করে ফেলেছে। ফলে নদী সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। যা আগামী বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা সৃষ্টি করবে। এক্ষেত্রে পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এবং ভৈরবসহ বিভিন্ন নদীর ভেতর পাকা স্থাপনা গড়ে তুলেছে।