স্পোর্টস ডেক্স
জয়ে শুরুর পর দুর্বার গতিতে এগোতে থাকা রংপুর রাইডার্স টানা আট ম্যাচ জিতে সবার আগে প্লে-অফের টিকেট কাটে। কিন্তু এরপর আর একটা ম্যাচও জিততে পারেনি, টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে বিপিএল থেকে বিদায় নিলো নুরুল হাসান সোহানের দল।
রংপুর রাইডার্সের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটসম্যানের নাম আকিফ জাভেদ। তবে তিনি ব্যাটসম্যান নন, বোলার। তার করা ৩২ রানই রংপুরের ইনিংসের সর্বোচ্চ। এতেই অনুমান করে নিতে পারেন দলটির ব্যাটিংয়ের হাল। আকিফ ছাড়া আর একজন করেছেন দুই অঙ্কের রান, সেটাও উল্লেখ করার মতো নয়। ফাইনালের রেসে টিকে থাকার লড়াইয়ে জেমস ভিন্স, আন্দ্রে রাসেল, টিম ডেভিডদের মতো তারকাদের দলে নিয়েও অল্পতে গুটিয়ে যায় চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়া রংপুরের ইনিংস। যে রান নাঈম শেখ, অ্যালেক্স রসের ব্যাটে হেসেখেলেই পার হয়ে যায় খুলনা টাইগার্স।
সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এলিমিনেটর ম্যাচে রংপুরকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে খুলনা। এই জয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নিলো মেহেদী হাসান মিরাজের দল। টানা তিন ম্যাচ জিতে ফাইনালের পথে তারা। লিগ পর্বের শেষ দুটি ম্যাচও তাদের জন্য নকআউটের মতো ছিল, হারলেই বিদায় নিতে হতো খুলনাকে। রংপুরের বেলায় ঠিক উল্টো। জয়ে শুরুর পর দুর্বার গতিতে এগোতে থাকা দলটি টানা আট ম্যাচ জিতে সবার আগে প্লে-অফের টিকেট কাটে। কিন্তু এরপর আর একটা ম্যাচও জিততে পারেনি, টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে বিপিএল থেকে বিদায় নিলো নুরুল হাসান সোহানের দল।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে রংপুর রাইডার্স। ব্যাটিংয়ে নেমে খুলনার স্পিনারদের ঘূর্ণিতে দুঃস্বপ্নের মাঝে পড়ে যায় ২০১৭ বিপিএলের চ্যাম্পিয়নরা। মিরাজ, নাসুম, নওয়াজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৬.৫ ওভারে ৮৫ রানেই অলআউট হয় রংপুর। বিপিএলের প্লে-অফের ইতিহাসে এই সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ, আগের সর্বনিম্ন ছিল ৮৬ রান। রংপুরের মাত্র দুজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন। বাকিদের কেউ ৭ রানের বেশি করতে পারেননি। জবাবে নাঈম শেখ ও অ্যালেক্স রসের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ১০.২ ওভারে ওভারেই জয় তুলে নেয় খুলনা টাইগার্স। ৫৮ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় তারা।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় খুলনার শুরুটা অবশ্য ভালো ছিলো না। প্রথম ওভারেই অধিনায়ক মিরাজের উইকেট হারায় তারা। শুরুতে হোঁচট খেলেও খুলনাকে অবশ্য চাপ বুঝতে হয়নি। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ে তোলেন নাঈম ও রস, তাদের ব্যাটেই দাপুটে জয় নিশ্চিত হয় খুলনার। ৬০ বলে ৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ম্যাচ জেতানোর হাসি হেসে মাঠ ছাড়েন তারা। আসরজুড়ে ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো নাঈম ৩৩ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন। এই ইনিংস দিয়ে চলতি বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গেছেন তিনি, ১৩ ইনিংসে একটি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৪.৭২ গড়ে নাইমের রান ৪৯২। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া রস ২৭ বলে ৪টি চারে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। রংপুরের যাওয়া একমাত্র উইকেটটি নেন রংপুরের পেসার আকিফ।
এর আগে ব্যাটিং করা রংপুরের ইনিংসে ছিল আসা যাওয়ার মিছিল। নাসুম-মিরাজদের স্পিন ঘূর্ণিতে ১৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে তারা। সামান্য একটু প্রতিরোধের পর আবারও উইকেট বৃষ্টি শুরু হয়, ৫২ রানের মধ্যেই ৯ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। এই সময়ের মাঝে কেবল সোহান কিছুটা লড়াই করেন। রংপুর অধিনায়ক ২৫ বলে ২টি চারে ২৩ রান করেন। ৫৯ রানে ৯ উইকেট হারানো দলকে ৮৫ রান পর্যন্ত পৌঁছে দেন আকিফ।
অন্য সবাই যখন ব্যর্থ, পাকিস্তানি এই পেসার তখন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। চাপ সামলানোর পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি মেজাজেই রান তুলে যান তিনি। নাহিদ রানাকে সঙ্গে নিয়ে শেষ জুটিতে ২৬ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। ৩১ রানই করেন আকিফ, দুই রান আসে অতিরিক্ত থেকে। ৯ বল খেলা নাহিদ কোনো রান করেননি। ১৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩২ রান করেন আকিফ। রংপুরকে দিক ভুলিয়ে দেওয়া খুলনার দুই স্পিনার মিরাজ ও নাসুম দুজনই ৩টি করে উইকেট নেন। ৪ ওভারে মিরাজের খরচা ১০ ও নাসুমের ১৬। একটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ নওয়াজ, হাসান মাহমুদ ও মুশফিক হাসান।