দায়সারাভাবেই শেষ হলো বাঘারপাড়ার কৃষিমেলা

0
23

বাঘারপাড়া প্রতিনিধি

ক্ষোভ দুঃখ হতাশা নিয়েই গতকাল বৃহষ্পতিবার শেষ হয়েছে যশোরের বাঘারপাড়ায় তিনদিন ধরে চলা এবারের কৃষি মেলা। মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির প্রতিনিধিরা মনে করেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবছর কৃষিমেলার আয়োজন করা হয় তা এবার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। যাদের জন্য এ মেলার আয়োজন সেই কৃষকরা মেলায় না আসায় এই ব্যর্থতা। এমনকি উপজেলার বেশিরভাগ কৃষক জানেই না এ মেলার কথা। উপজেলা কৃষি অফিসের পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবেই এমনটি ঘটেছে বলে মনে করেন তাঁরা।

সরেজমিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেলা ঘুরে দেখা গেছে, উদ্বোধনের দিন মঙ্গলবার ও বুধবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় কিছু শিক্ষার্থী দেখা গেলেও মেলার শেষ দিন বৃহষ্পতিবার শিক্ষার্থী বা কৃষক কাউকেই দেখা যায়নি। তবে মেলায় অংশগ্রহণকারি সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের দেখা গেছে।

রায়পুর ব্লকের শালবরাট গ্রামের বাচ্চু মিঞা, জামদিয়া গ্রামের কমলাপুর গ্রামের সুভাষ বিশ্বাস, ঘোড়ানাছ গ্রামের মলয় লষ্কর, দোহাকুলা ব্লকের তরিকুল ইসলাম সহ অনেকেই এ প্রতিবেদককে জানান, কৃষিমেলা সম্পর্কে আমরা কিছইু্ জানিনা। তবে শেষ দিনের সমাপনিসভায় যোগ দেওয়া নারিকেলবড়িয়া ব্লকের ক্ষেত্রপালা গ্রামের মোতালেব হোসেন জানান, মেলার প্রথম দুইদিন না আসলেও উপসহকারি কৃষিকর্মকর্তার অনুরোধে (ফোনে) এসেছি।

মেলায় অংশগ্রহণকারি বাঘারপাড়া পৌরসভার ‘কবির ট্রেডার্স’ এসিআই ক্রপ কেয়ার ও অটোক্রপ কেয়ারের জৈব ও রাসায়নিক সার নিয়ে একটি স্টল খুলেছেন। এছাড়াও ফসলের ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক ও ফসল রক্ষাকারি বিভিন্ন কিটনাশকের নমুনা নিয়ে আরেকটি স্টল নিয়েছেন। সেখানে কর্তব্যরত বিক্রয় প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘তিনদিন ধরে যাদের জন্য বসে আছি সেই কৃষকের উপস্থিতি এখানে নেই বললেই চলে। তিনি মনে করেন বিভিন্ন ইউনিয়নে একদিন মাইকিং করলে হয়তো বেশ সাড়া পাওয়া যেত।

একই মন্তব্য করেছেন, মিমপেক্স এ্যগ্রো লি: ও ইনতেফা এ্যাগ্রো লিমিটেডের চাড়াভিটা শাখার প্রতিনিধি যথাক্রমে মাজহারুল ইসলাম ও তুহিন রেজা। তবে আশার কথা বলেছেন মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রথম দুদিনে অনেক শিক্ষার্থী মেলায় এসেছে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্ম মেলা থেকে কৃষিপ্রযুক্তির ধারনা নিয়ে এর ব্যবহারে যথেষ্ট সচেতন হবে।’ মেলায় যশোর থেকে এসেছেন ‘লালতীর সীড লিমিটেড’এর প্রতিনিধি ইব্রহিম শাওন। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘যাদের জন্য এত বীজ ও প্রচারপত্র নিয়ে একটি স্টল নিলাম সেই কৃষক সল্পতার কারনে কিছু রাজনৈতিক নেতার হাতে প্রচারপত্র দিয়ে ছবি তুলে কোম্পানির কতৃর্পক্ষকে পাঠিয়েছি’।

গত মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে শুরু হয় এ কৃষিমেলা। মেলায় কৃষিপ্রযুক্তি, পশুখাদ্য, বীজ, মৎস্যখাদ্য, কীটনাশক, কৃষকের উৎপাদিত ফসল, মৌচাষ, ব্যংকসহ উপজেলার কৃষিসংশ্লিষ্ট সরকারি অধিদপ্তর ও কোম্পানির অংশগ্রহনে বিশটি স্টল তৈরি করা হয়। কৃষক ও কৃষিতথ্যের সমন্বয় ঘটাতে এসব মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান কৃষি অফিস। যেখানে কৃষক তাঁর ফসলের রোগ—বালাই, বালাইনাশক, কৃষিঋণ, বীজের মান, জমির প্রকৃতিভেদে ফসল, গবাদিপশুপালন ও মৎসচাষ সম্পর্কে তথ্য পেয়ে থাকেন।

মেলায় কত টাকা বরাদ্দ এবং কৃষকদের অনুপস্থিতির কারন জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ফোনটি রিসিভ না করায় উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রুহুল আমিনের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি যশোরের উপপরিচালক ও মেলার সমাপনি দিনের প্রধান অতিথি মঞ্জুরুক হক বলেন, ‘শেষ দিনে মেলায় যথেষ্ট কৃষক উপস্থিত ছিলেন’।