সত্যপাঠ রিপোর্ট
১৯৮৬ সাল। তখনও শিক্ষার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেনি যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায়। ১৯৮৬ সালে বর্তমান নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় যা তখন কেবল শংকরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত ছিলো সেখানে শিশুদের জন্য প্রাথমিক শাখার যাত্রা শুরু করালেন। সেই থেকে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা।
প্রাথমিক শাখা হতে গোড়াপত্তন ঘটিয়ে সমৃদ্ধ করা হত মাধ্যমিক শাখাকে। প্রাথমিক শাখায় শিশুদের ভিত্তি গড়া শুরু হওয়ার পর মাধ্যমিকে প্রশংসা কুড়াতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ধীরে ধীরে অত্র অঞ্চলের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ লাভ করে। যা এক পর্যায়ে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেতাব অর্জন করে। এবং সর্বশেষ বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়।
স্থানীয় সচেতনমহল ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন মাধ্যমিক শাখার এ সকল অগ্রগতির পেছনে তিন যুগেরও অধিক সময় ধরে একটি বড় অবদান রেখে এসেছে প্রাথমিক শাখাটি। এই প্রাথমিক শাখারই ছাত্র ছিলেন বর্তমান সরকারি মাধ্যমিক শাখার প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম।
এছাড়া এই প্রাথমিক শাখায় লেখাপড়া শিখে শত শত শিক্ষার্থী আজ সমাজের উচ্চতর স্থানে আসীন হয়েছে। অনেকেই আজ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী হয়ে সমাজে অবদান রেখে চলেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই মাধ্যমিক শাখাটি সরকারি করণের প্রক্রিয়া চলাকালীন একটি মাত্র ভুলের জন্য তিন যুগেরও অধিক সময় ধরে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখা নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখাটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে প্রাথমিক শাখার নামে আলাদাভাবে কোন জমি বরাদ্দ রাখেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে শিক্ষক আছেন, শিক্ষার্থীও আছে নেই কেবল প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব অস্তিত।
জানাগেছে, ২০১৬ সালে মাধ্যমিক শাখাটি সরকারিকরণে গেজেটভুক্ত হয়। এবং ২০১৭ সাল থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু বাদ পড়ে যায় প্রাথমিক শাখাটি। গেজেটভুক্তির আগে বিদ্যালয়টির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির জরিপে মাধ্যমিক অংশের সাথে প্রাথমিক শাখার ভবন, চেয়ার টেবিলসহ যাবতীয় স্থাবর সম্পত্তি নথিভুক্ত হলেও বাদ রাখা হয় প্রাথমিক শাখার নামটি। মাধ্যমিক শাখা থেকে যদিও দাবি করা হয়েছে ভুলে প্রাথমিক শাখার নামটি অন্তর্ভূক্তিকরণ বাদ পড়েছে। কিন্তু স্থানীয় সচেতন মহল দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে চলে আসা একটি শাখার নাম ভুল করে বাদ পড়ার বিষয়টি যৌক্তিক মনে করেন না।
এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টির প্রতি আমার মানবিক দৃষ্টিকোন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা তো সকলকে মানতেই হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেকশন আর প্রাথমিক সেকশন সম্পূর্ণ আলাদা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় কোন প্রাথমিক শাখা সরকারি করণের সুযোগ নেই। তবে তিনি নিজে ওই প্রতিষ্ঠানের (প্রাথমিক শাখার) শিক্ষার্থী ছিলেন বলে স্বীকার।
এছাড়া প্রাথমিক শাখায় তার সময়কার শিক্ষকরা এখনও খেয়ে না খেয়ে পাঠদান করে চলেছেন বলে জানান। এক প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, বড় যে ভুলটা হয়েছে প্রাথমিক শাখাটা প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেউ এ শাখাটি স্বতন্ত্রতা দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটিকে স্বতন্ত্রতা দিলে এবং প্রতিষ্ঠানের নামে প্রয়োজন মতো জমি বরাদ্দ দিয়ে রাখলে আজ তাদের অস্তিত্বহীন হতে হতোনা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার সভাপতি, অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীরের সাথে। তিনি বলেন, তিন যুগেরও অধিক সময় ধরে চলে আসা এ প্রাথমিক শাখার সাথে গোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেবল নয়, অভয়নগরের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ইতিহাস মিশে আছে। মিশে আছে অভয়নগরে শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস। সেই সাথে অভয়নগরের প্রয়াত অসংখ্য আলোকিত মানুষের স্বপ্ন মিশে আছে এ প্রাথমিক শাখার সাথে। তাই যে কোন মূল্যে এ প্রাথমিক শাখার অস্তিত্ব বিলীন হতে দেয়া যাবেনা। তিনিও প্রাথমিক শাখাটিকে রক্ষার্থে জাতীর পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।