রনজিনা খানম, নড়াইল
ট্রিপল মার্ডার সহ গ্রাম্য কোন্দলে জর্জড়িত নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার গন্ডব ও চালিঘাট গ্রামবাসী দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে শান্তির শপথ নিয়েছেন। আগামীতে কোন ভুল বোঝাবুঝি হলে নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখবেন।
শুক্রবার বিকেলে লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আইন শৃংখলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় দুপক্ষের মাতুব্বর সুলতান মাহমুদ বিপ্লব ও মিরাজ মোল্যা হাতে হাত রেখে শান্তির শপথ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় (পিপিএম বার)।
লোহাগড়া থানার আয়োজনে সভায় লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আবু হেনা মিলনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানজিলা সিদ্দিকা, লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সহ-সভাপতি ফয়জুল হক রোম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মশিয়ূর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিহানুক রহমান, লোহাগড়া পৌর আুওয়ামীলীগের সভাপতি কাজী বনি আমিন ও কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান।
বিদমান দুটি গ্রুপের মাতুব্বর মিরাজ মোল্যা ও সুলতান মাহমুদ বিপ্লব তাদের দীর্ঘদিনের রাগ-ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন।
মিরাজ মোল্যা বলেন, ২০২০ সালের ১০ জুন আমার পক্ষের তিনজনকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। ট্রিপল মার্ডারের আসামীরা জামিনে এসে আমাদের পক্ষের লোকজনের ওপর নির্যাতন করে আসছে। কয়েকদিন আগে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ সুলতান মাহমুদ বিপ্লবের লোকজন আমার বাড়িতে ঢাল-সড়কি নিয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। তবে আমরা অতীতের সব কিছু ভুলে গিয়ে এলাকায় যাতে শান্তি বিরাজ করে আমি সেই আশা করি।
অপরপক্ষের মাতুব্বর সুলতান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, ‘ আগে যাই ঘটুক, ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নিয়ে হোক আর শয়তানের প্ররোচনায় হোক ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। বর্তমানে আগের থেকে গ্রামের বিবদমান দুটি পক্ষের মন-মানসিকতা শান্তির পক্ষে। আমি কথা দিচ্ছি। আমার পক্ষের কেউ অন্যায় করলে আলোচনার মধ্যদিয়ে মিমাংসা করা হবে। আমরা উভয়পক্ষ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ। আমিসহ আমার পক্ষের লোকজন আর কোন গেলোযোগ করতে চাই না। আমরাও শান্তি চাই।’
পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় (পিপিএম বার) বলেন, ‘গন্ডব-চালিঘাট গ্রামে গত বছর দুই গ্রামাবাসীকে মিলিয়ে দেওয়ার পর তিনটি খুনের ঘটনা ঘটলো। যে তিনজন মারা গেলো, তাদের সংসার কে চালাচ্ছে? আপনারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে কি আপনার দলের মাতুব্বর দেখবে? আপনাদের কি খেতে-পরতে দিবে ? তাদের সন্তান, তাদের স্ত্রী, তাদের মাকে কে দেখছে? আপনারা কি শান্তি চান? আপনারা মারামারি করে কি লাভ পাচ্ছেন ?
পুলিশ সুপার দুপক্ষের মাতুব্বরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা দুই মাতুব্বর কেন চাচ্ছেন না যে আপনাদের এলাকাটা ভাল থাকুক। এলাকায় শান্তি স্থাপন হোক। এলাকায় কোন সমস্যা হলে আপনারা দুই মাতুব্বর বসে মিমাংসা করবেন। যার যার দলের লোকজনের ভালমন্দ গ্রুপের মাতুব্বরা দেখবেন। কোন সংঘাত হলে পুলিশ প্রশাসন কোন ছাড় দেবে না। আমি চাই না কোন মায়ের কোল খালি হোক। পুলিশ সুপার হিসেবে এলাকায় শান্তি স্থাপন করার জন্য যা যা করণীয় আমি তাই করবো। গোলোযোগ করলে কেউ রক্ষা পাবেন না।’
সভা শেষে হাতে হাত রেখে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার শপথ নেন বিবাদমান দুটি পক্ষের মাতুব্বার শেখ সুলতান মাহমুদ বিপ্লব ও মিরাজ মোল্যা। অনুষ্ঠানে গন্ডব ও চালিঘাট গ্রামের বিবদমান দুটি গ্রুপের সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব ও চালিঘাট গ্রামে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধের জের ধরে ২০২০ সালের ১০জন তিনজন নিহত হন। সম্প্রতি আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ঢালম সড়কিসহ দেশীয় অস্তশস্ত্রাদি নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলশ্রুতিতে জীবনহানিসহ কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।