খান আসাদ
পুঁজিপতি শিল্পমালিকদের পক্ষের বুদ্ধিজীবীরা বরাবরই বোঝাতে চান, “ব্যক্তিমালিকেরা ত্রাতা, এরা কারখানা না বানালে, তোমরা কাজ করতে পারতেনা। কাজ না পেলে তোমরা বেঁচে থাকতেনা।” মানে পুঁজিবাদী মালিকেরা প্রায় ঈশ্বরের মত, শ্রমিকদের রুটিরুজির ব্যবস্থা করছে, দয়া করে। তবে, যেহেতু এই মালিকদের হাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী আছে, ফলে কার্যত এরা ঈশ্বরের মতই ক্ষমতাবান।
নিউটন যেমন মাধ্যকর্ষনশক্তি আবিষ্কার করেছেন, ডারউইন যেমন বিবর্তনতত্ত্ব, তেমনই মার্ক্স বিস্তারিত ভাবে লিখলেন উদ্বৃত্তমূল্য তত্ত্ব। অর্থনীতির ইতিহাস পাঠ থেকে দেখালেন পুঁজির ইতিহাস, যা রক্তপাত, লুণ্ঠন ও নিপীড়নের ইতিহাস।
পশুর মত ট্র্যাকে তুলে দেয়ার ছবি দেখছি। নারী গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকায় আসার। এক সচিত্র অমানবিক নিপীড়নের আখ্যান। মানবতার এই অপমান বাংলার শ্রমজীবীদের প্রাপ্য ছিলোনা।
বাংলাদেশের শিল্পের বিকাশ অন্য ভাবেও হতে পারতো। মুক্তিযুদ্ধের পরে, সেই পথ রচিত হয়েছিল, ইন্ডস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস (আইএমএস) ক্যাডার তৈরির মাধ্যমে, যারা জাতীয় শিল্পের পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। শিল্প হবে রাষ্ট্রীয় মালিকানায়, পরিকল্পনা ছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানার সাথে, হতে পারতো সমবায় মালিকানায় শিল্প, সংবিধানে তা ও সংযোজিত আছে। হতে পারতো রাষ্ট্রীয় ও শ্রমিকসমবায় মালিকানার সাথে ব্যক্তিউদ্যোগ যেমন ফজলে হাসান আবেদের মত এন্টারপ্রেনারদের প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা। ব্যক্তিমালিকানার বিকল্প ছিল এবং এখনো আছে।
শিক্ষা সংস্কারের একটি উদ্যোগও ছিল, কুদরতি খুদা শিক্ষা কমিশন। এই নীতি বাস্তবায়িত হলে, আমরা মানবসম্পদ উন্নয়নের এমন এক স্তরে থাকতাম যে, সৌদি বা অন্যদেশ থেকে আধুনিক বাঙালী দাসদের লাশ হয়ে ফিরতে হতোনা।
প্রশ্নটা দৃষ্টিভঙ্গীর। আপনি শোষক লুটেরা শ্রেণীর পক্ষের হলে, শিল্পমালিকদের ঈশ্বরের মত দেখবেন। আর সমাজবিজ্ঞানের আলোয় দেখলে, বুঝবেন, নারীর, কৃষকের ও শ্রমিকের শ্রমের ভূমিকা ও অবদান, জাতীয় অর্থনীতিতে।
যে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ও শিক্ষায় অগ্রসর দেশ হতে পারতো, সেই পথ থেকে সরে আসাও হয়েছে, অনেক রক্তপাতের মধ্যদিয়েই। নয়া-উদারবাদি, ব্যক্তিমালিকানা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য, সাম্রাজ্যবাদ ও তাঁদের এদেশীয় অনুচরদের অনেক অনেক রক্তপাত ঘটাতে হয়েছে, এই দেশে।
ইতিহাসের পুনঃপাঠ সকলের জন্যই জরুরী, যারা আমরা একটি সমৃদ্ধ, সাম্য ও শান্তির বাংলাদেশ চাই।