প্রদীপ বিশ্বাস, বাঘারপাড়া
যশোরের বাঘারপাড়ায় করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত নিজের জীবনের মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নিরলস কাজ করে চলেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও করোনা ফোকাল পার্সন ডা. শাহ-আলম রুবেল। করোনার শুরু থেকে এ যাবত সাড়ে ৪ শতাধিক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যার সিংহভাগ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন এ মানবিক ডাক্তার।
কখনও আউটডোরে রোগি দেখছেন, আবার কখনও করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে তদারকি করছেন, আবার কখনও করোনার টিকা প্রদানের কাজেও সহযোগিতা করছেন। এ ছাড়াও ২৪ ঘণ্টাই তিনি টেলিফোনে রোগীদের সেবা দিয়ে চলেছেন। তাঁর দেওয়া চিকিৎসায় প্রায় সবাই সুস্থ্য হয়েছেন। ভালো সেবা পেয়ে খুশি হয়েছেন করোনা আক্রান্ত রোগীরাও।
ডা. শাহ-আলম রুবেল যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের আজমতপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে। তিনি উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ঢাকা মেডিকেলে অর্থপেডিক সার্জারি (এমএস) পড়াশোনা করছেন।
এছাড়া জেনারেল সার্জারিতে এফসিপিএস পারট-১ পাস করেছেন। তাঁর বাবা বাঘারপাড়া উপজেলার ভিটাবল্লা পুলিশ ক্যাম্পের উপ পরিদর্শক। তাঁর স্ত্রী ডা. জান্নাতুল আসেফীন বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন (এফসিপিএস মেডিসিন) হিসেবে কর্মরত আছেন।
তিনিও স্বামী রুবেলের মত নিয়মিত আউটডোর-ইনডোরে রোগীদের সেবা দিয়ে চলেছেন। উচ্চতর ডিগ্রির জন্য তিনিও (ডা. জান্নাতুল আসেফীন) ঢাকা মেডিকেলে এন্ডোক্রাইনোলজি (এমডি) পড়াশোনা করছেন। ডা. শাহ-আলম রুবেল ও ডা. জান্নাতুল আসেফীন দম্পত্তির দুই বছর চার মাস বয়সের একজন ছেলে রয়েছেন। তার পরেও থেমে নেই করোনা রোগীসহ অন্য রোগীদের চিকিৎসা সেবায়।
এ বিষয়ে কথা হয় ডা. শাহ-আলম রুবেলের সাথে। তিনি বলেন, উপজেলায় করোনায় ৪৭০ জন আক্রান্তের প্রায় ৪৩৪ জনকে নিজে সেবা দিয়েছি। এর মধ্যে ২৩২ জনকে মোবাইলে ও ২০২ জনকে স্ব-শরীরে সেবা দিয়েছি। তবে আক্রান্ত ৪৭০ জনকেই মনিটরিং করেছি। বর্তমান চিকিৎসাধিন ৩৪ জনকে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছি। সার্বিক বিষয়ে নিয়মিত তদারকিও করা হচ্ছে।
এছাড়া করোনার ভ্যাক্সিন প্রদানের জন্য প্রতিদিন শিডিউল তৈরি করা, কারোর ভ্যাক্সিনেশনে কোনো সমস্যা হলে সমাধান করাসহ যাবতীয় কাজ করতে হয়। আমাকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ও সিএইচসিপিসহ স্বাস্থ্য সহকারীরা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য ডাক্তার হয়েছি। নিজের শরীরের কোনো ত্রুটি না হলে আমি মানুষের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবো। করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হওয়া রোগী রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের শামীম রেজা জানিয়েছেন, করোনার নমুনা দেওয়া থেকে শুরু করে ডা. শাহ-আলম রুবেলের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে ছিলাম। প্রতিদিনই মোবাইল ফোনে কল করে খোঁজ খবর নিতেন। তার ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়েছি। এমনই ডাক্তার প্রয়োজন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধিন হাজেরা খাতুন বলেন, ডা. শাহ-আলমের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য আছি। নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া রোগীদের সাথে সব সময় খোলামেলা কথা বলেন। এতেই রোগ অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়।
বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সম্মুখযোদ্ধাদের একজন ডা. শাহ-আলম রুবেল। তিনি সাহসিকতার সাথে মাঠে কাজ করে চলেছেন।
তার সাথে সহযোগিতা করছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কৌশিক আশরাফ। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন সকালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মুঠোফোনে কল করে খোঁজ খবর নেওয়া হয়। রোগীরা কোনো সমস্যার কথা জানালে সাথে সাথে ঔষধের নাম লেখে তাদের ফোনে খুদে বার্তা করে পাঠানো হয়। তবে ডা. রুবেল ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে চলেছেন।
উল্লেখ্য, বাঘারপাড়া উপজেলায় করোনা শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৪৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ্য হয়েছেন ৪২।