মোকাদ্দেছুর রহমান রকি
যশোর সদরের ৪ নং নওয়াপাড়া ইউনিয়নে জনগনের সামনে চলছে ভেজাল সারের জমপেশ ব্যবসা। সংক্রমন করোনা ভাইরাস এই সব ভেজাল সার উৎপাদনকারীর ভাগ্য খুলে দিয়েছে। যখন দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী লক ডাউনে ব্যস্ত সরকারী অফিস আদালত যেখানে বন্ধ সেখানে থেমে নেই ভেজাল সার উৎপাদনকারীদের কার্যক্রম। যশোর সদর উপজেলার অধীনে ৪ নং নওয়াপাড়া ইউনিয়নে সরে জমিন ঘুরে ভেজাল সার উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন তথ্য মিলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর সদরের শেখহাটি এলাকার মানুষ জানান, ৪নং নওয়াপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় গড়ে উঠেছে কমপক্ষে পাঁচটি ভেজাল সার কারখানা। এই সব ভেজাল সার কারখানায় করোনা ভাইরাসের মধ্যে দিনে ও রাতে তৈরী হয়েছে ভেজাল সার ও কীটনাশক। আগামী শীত মৌসুমের টার্গেট নিয়ে এসব ভেজাল সার কারবারীরা প্রতিনিয়ত তৈরী করেছে ভেজাল দস্তাসার ও কীটনাশক। অবৈধভাবে উৎপাদনকারী ভেজাল সারের ব্যবসাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অফিসের অনুমতি পত্র ছাড়াই গড়ে ওঠা এইসব ভেজাল সার কারখানায় কোন লাইসেন্স বা অনুমোদন নেই।
যার কারনে এসব ভেজাল সার কারবারীরা তাদের ইচ্ছে মাফিক টাইলসের মাটি, চুন, সুরকি, ডলোমাইট, সিমেন্ট, ইটেরগুড়া, রংসহ বিভিন্ন উপকরণ যা মাটির জন্য চরম ক্ষতিকারক সেগুলো মিশিয়ে তৈরী করছে ঝঁকঝকে দস্তাসহ বিভিন্ন সার ও কীটনাশক।
এছাড়া, এসব ভেজাল সার কারবারীরা ভেজাল দস্তা সারের পাশাপাশি জিপসাম তৈরী করছে নিন্ম মানের সাদা পাউডার ও বালি দিয়ে। প্রতিনিয়ত টনটন ভেজাল সার উৎপাদন করে এসব ভেজাল সার কারবারীরা তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাগুলিতে পৌছে দিচ্ছে।
সূত্রগুলো বলেছে, এসব ভেজাল সার কারবারীরা তাদের ব্যবসাকে ঠিকঠাক রাখতে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের সাথে মাসিক সখ্যতা রেখে তাদের এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
তাছাড়া, কতিপয় ব্যক্তি যশোর কোতয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পিবিআই, র্যাবসহ দেশের বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যশোরের প্রধানদের সাথে চুক্তির কথা বলে ভেজাল সার কারবারীদের কাছ থেকে মাসিক মোটা অংকের উৎকোচ আদায় করছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, ভেজাল সার ও কীটনাশক ব্যবসা করে কালো টাকা পাহাড় বনে গেছেন এই ভেজাল সার কারবারীদের সকলে।
ভেজাল সার কারবারীরা তাদের উৎপাদিত ভেজাল সার ও কীটনাশক দেশের বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানীর মোড়ক ছাপিয়ে বাজার জাত করছে। তারা ঝামেলা এড়াতে অনেক সময় নিজেদের ক্রয়কৃত যানবাহন অর্থাৎ ট্রাক, মিনিট্রাক, পিকআপ, নছিমন, করিমন, ভটবটি, ইজিবাইক, ভ্যান, রিকশাসহ বিবিন্ন যানবাহন ব্যবহার করছে।
অনুসন্ধান চালিয়ে আরো জানাগেছে, এই ভেজাল সার কার কারবারীদের মধ্যে রাতারাতি কোটপতির কাতারে বনে গেছেন, ইমরান, সাহাপুর আড়পাড়া বর্তমানে যশোর শহরের ঘোপ জেলরোডস্থ বিশাল ভবনের মালিক সহিদুল ইসলাম, শেখহাটি এলাকার এআর এগ্রো কেমিক্যালের মালিক রাজু আহম্মেদ।
এছাড়া, কোটিপটি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রয়েছেন, শেখহাটির ইবাদুল, মাহাবুব, নেছার, মহিউদ্দিন, এখলাছ, রশিদ, ইমদাদ, প্রিন্স, তরিকুল, শিহাবসহ ১৫জনের একটি গ্রুপ।
সূত্রগুলো আরো জানিয়েছেন, ইমরান মূলত ভেজাল সারকার উৎপাদনের যাত কাঁচামাল আছে সেগুলি সরবরাহ করে। যার জন্য তার কোন সার কারখানা নেই। সে ভেজাল এসব সার কারখানার মালিকের কাছে বাকী কয়েক লাখ টাকার কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে।
সূত্রগুলো আরো জানান, গত ৯ জুলাই সদর উপজেলার ঘুরুলিয়া এলাকায় একটি ভেজাল সার বোঝাই মিনিট্রাক একজন পুলিশ কর্মকর্তা সাদা পোশাকে থামিয়ে একটি রফাদফার মাধ্যমে ছেড়ে দেন। বিষয়টি ঘুরুলিয়াস্থ ঋষি পাড়া এলাকার অনেকে দেখেছে। যেখানে পুলিশ সুপারের নির্দেশ রয়েছে পুলিশ অবৈধ পন্থায় কোন অর্থ উপার্জন করবেনা। সেখানে যশোরের ওই ইউনিয়ন ঘিরে গড়ে ওঠা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ও সেখানে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্যদের খুশী রেখে অবাধে চলছে ভেজাল সার উৎপাদন ও বিকিকিনি।