মিজানুর রহমান, মণিরামপুর
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার যশোরের মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যবরণ করেন প্রফুল্ল্য সরকার তপন নামের এক ব্যক্তি। করোনায় মৃত্যু হওয়ায় হাসপাতালেই প্রায় ঘন্টা তিনেক তার মরদেহ পড়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত তাকওয়া ফাউন্ডেশনের ৫ মুসলিম যুবক গভীর রাত পর্যন্ত শ্মশানে তার সৎকার করেন। ঘটনাাটি নিয়ে মণিরামপুরে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
জানাযায়, প্রফুল্ল্য সরকার ওরফে তপন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের মৃত. রতন সরকারের ছেলে। তিনি পেশায় ছিলেন কর্মকার। উপজেলার গোপালপুর বাজারে ছিল তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার তার অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা তাকে মণিরামপুর হাসপাতালে বিকেলে ভর্তি করেন। ভর্তির পর সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তাকওয়া ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য আশরাফুল আনোয়ার ইয়াসীন বলেন, মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনায় আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার সন্তান কিংবা নিকটাত্বীয়রা কেউ মরদেহ গ্রামে নিয়ে যায়নি। প্রায় ঘন্টা তিনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় পড়ে রয়েছে প্রফুল্ল্য সরকারের মরদেহ।
তাদেরকে ঘটনাটি উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী অবহিত করলে ফাউন্ডেশনের ৫ সদস্যকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। ঘড়ির কাটা তখন রাত ১০টা ছুঁই ছুঁই। হাসপাতালে গিয়ে দেখেন আব্দুর রহিম নামের এক ভ্যানওয়ালার ভ্যানের ওপর অযতেœ-অবহেলায় পড়ে রয়েছে তপন সরকারের মরদেহ। তারা নিজেরাই ভ্যান চালিয়ে পৌরশহরের তাহেরপুর মহাশ্মশানে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে ঘটে আর এক বিপত্তি। শ্মশানের ঘোষাই (শ্মশানের দায়িত্বে নিয়েজিত) তপন সরকারের মরদেহ সেখানে সৎকার করতে আপত্তি জানায়।
এরপর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড (মণিরামপুর) কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধূরী ও তার এক সহযোগী বিশ্বজিৎ সেখানে গিয়ে ঘোষাইকে কোনরকম ম্যানেজ করে। মরদেহ গোছল ছাড়াই দাহ হচ্ছিল। এরপর সনাতন ধর্মীয় রীতি মেনেই গোছল করিয়ে চিতাই ওঠান তারা। মরদেহ গোছলের জন্য শ্মশানে মোটরের ব্যবস্থা থাকলেও সেখান থেকে পানি নিতে দেয়নি দায়িত্বরত ঘোষাই। পরে নদী থেকে বালতি ভরে পানি উঠিয়ে গোছল করান মুসলিম ৫ যুবক। এসময় শ্মশানে চিকিৎক মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টু, সংবাদ কর্মী আব্দুল্লাহ সোহান উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, মৃত্যু ব্যক্তির সন্তানসহ স্বজনরা মরদেহ বাড়িতে নিতে অনিহা প্রকাশ করছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও নিকটাত্বীয়রা লাশ নিয়ে যায়নি। তিনি খবর পেয়ে সাথে সাথে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যদের খর দেওয়া হয়। তারাই ওই লাশের সৎকার করেন।
কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধূরী বলেন, শ্মশানে করোনায় আক্রান্ত এক ভ্যক্তির মরদেহ আনা হয়েছে কিন্তু আগুন দেওয়ার কোন লোক পাচ্ছেনা। এমন খবর পেয়ে তিনি সাথে সাথে শ্মশানে ছুটে যান। রাত প্রায় ৪ টা পর্যন্ত ওই লাশের সৎকারের কাজ চলে। তিনি আরও জানান, মৃত তপন সরকারের দুই ছেলে শ্মশানে এরেও তারা দূরে অবস্থান করেছে। বাবার মরদেহ ছুইয়েও দেখেনি তারা।
তপন সরকারের বড় ছেলে বিপ্লব সরকার বলেন, করোনায় বাবার মৃত্যুর খবর গ্রামবাসি জানতে পেরে সৎকারের জন্য নিজেদের শ্মশানে আনতে আপত্তি তোলে। এ কারনে বাবার মরদেহ বাড়িতে না এনে তাহেরপুর শ্মশানে সৎকার করেছে তাকওয়া সদস্যরা।