সত্যপাঠ রিপোর্ট
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে তা সামুদ্রিক ঝড়-তুফান-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা জন্য প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবন ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে।
এমনিতেই ভৈরব নদের প্রবাহ (River system) বন্ধ থাকায় উজানের মিঠাপানির অভাবে শতবছর ধরে সুন্দরবনের পরিস্থিতি নাজুক। গাছপালা মাথামরা রোগে আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপদি্যুৎ প্রকল্প হবে মড়ার উপর খাড়ার ঘা।
জানা গেছে ভারত থেকে নি¤œমানের কয়লা আমদানি করে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো হবে। আর এই কয়লা আসবে রায়মঙ্গল-চালনা-মোংলা রুটে। এই রুটে রয়েছে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব-বলেশ্বর-শিবসা-শাকবাড়িয়া-আড়পাঙ্গাশিয়া-কালিন্দী-পানগুছি-রায়মঙ্গল নদী। প্রতিমাসে ভারত থেকে আসবে ৩০টি এবং আকরাম পয়েন্ট থেকে ৮০টি কয়লাবাহী জাহাজ।
ইতোমধ্যে গত ১০ বছরে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে শ্যালো-পশুর-কুঙ্গা ও ভৈরব নদে ১১টি এবং ভারতের অংশে ৯টি ফাইঅ্যাশের কারগো ডুবেছে। যার ফলে ৬ হাজার টন ফাইঅ্যাশ, ৫ হাজার টন কয়লা, ৩৭০ টন জ¦ালানি তেল, ৫০০ টন পটাশিয়াম, ১ হাজার ৩৬ টন জিপসাম ও ৭০০ টন গম সুন্দরবনের নদী ও বনাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে এর দুষণের সাথে কয়লা পরিবহণজনিত দুষণ যুক্ত হবে। তাতে সুন্দরবনের মাটি-পানি-গাছপালা ও প্রাণ-সম্পদের সমূহ ক্ষতি হবে।
সমূহ সঙ্কটের মুখে পড়বে বিশ^ ঐতিহ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবন। বিপন্ন হবে এখানকার জীবন-জীবিকা। সেই সাথে বৈশ্বক উষ্ণায়ণের প্রভাব যুক্ত হলে যে মহা বিপর্যয় নেমে আসবে তা কল্পনা করা যায় না।
নেতৃবৃন্দ গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন এবিষয়ে দেশিবিদেশি পরিবেশবিদ ও বিশ্বনেতৃবৃন্দের আপত্তি উপেক্ষা করে সরকার রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে নাছোড়বান্দাএবং অনড় অবস্থানে রয়েছে। আমাদের দৃঢ় ধারণা শুধু ভারতীয় করপোরেট পুঁজির স্বার্থ রক্ষার তাগিদে সরকার নতজানু নীতি অবলম্বন করে চলেছে।
বার বার সতর্কীকরণের ফলে দেশের সাধারণ জনগণ অবগত আছেন বৈশ্বক উষ্ণায়ণ ও জলবায়ুুু পরিবর্তনের অভিঘাতে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চল। সরকার একদিকে বিশ্বসমাজের কাছে ভিক্ষার ঝুলি হাতে সাহায্যের আবেদন করে চলেছে অন্যদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র্র করতে নাছোড়বান্দা। যা স্ববিরোধী।
অতি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ জি-৭ ভুক্ত দেশগুলি বিশ্বপরিবেশ রক্ষায় জৈবজ্বালানি বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক শিল্প-কারখানা থেকে সরে আসতে মতৈক্যে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ সরকার তখনও রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বানাতে একরোখা মনোবৃত্তি দেখিয়ে চলেছে। বৈশ্বক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য যে তাগিদ তার সাথে এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অযৌক্তিক বিষদৃশ ও সাংঘর্ষিক।
যুক্তবিবৃতিতে সই করেছেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রমা কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালি, ভৈরব সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক আফসার আলী, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস, চিত্রা বাঁচাও আন্দেলনের আহ্বায়ক মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু, মুক্তেশ্বরী বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিলচন্দ্র বিশ্বাস, দর্শনা ভৈরব-মাথাভাঙ্গা-কপোতাক্ষ সংযোগ আন্দোলন কমিটির সম্পাদক আকমত আলী, মাথাভাঙ্গা-ভৈরব সংযোগ বাস্তবায়ন কমিটি-জীবননগর-এর সম্পাদক কাজী বদরুদ্দোজা এবং নদী আন্দোলনের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ প্রতিবেশ জীববৈচিত্র্য ও সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থে আর কালক্ষেপণ না করে নেতৃবৃন্দ সরকারকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের আহ্বান করেছেন।