মণিরামপুরে করোনা-উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ ব্যক্তিদের দাফনে হাফিয়ে উঠছেন তাকওয়া ফাউন্ডেশন

0
158

মিজানুর রহমান, মণিরামপুর

যশোরের মণিরামপুরে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের কাফন-দাফন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন সদস্যদের। শনিবার একদিনে মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ১১ ব্যক্তির করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়। এরমধ্যে ৫ জনকে তাকওয়া ফাউন্ডেশন কাফন-দাফন করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে মহতি এ কাজটি করে হাফিয়ে উঠা সদস্যদের মাঝে কোন কান্তির ছাপ নেই। এরপরও তারা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিদিন মহৎ এ কাজটি করেই চলে কেেছন। জানাগেছে, করোনা পরিস্থির শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা ৩৬ জন রানা-করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির মরদেহ কাফন-দাফন করেছেন।

এ অবস্থার বর্ণনা করে হতাশা প্রকাশ করলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানম। তিনি বলেন, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা করোনায় মৃতুবরণকারীদের কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে একের পর এক স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েই চলছেন। কিন্তু আমরা তাদের কোন ভাবেই মূল্যায়ন করতে পারছিনা।

জানা গেছে, শনিবার উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ নারী-পুরুষের। যা এ বছরের হিসেব মতে মণিরামপুরে সর্বোচ্চ বেশি মৃত্যু। এ দিন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ৫ জনের দাফন করেছেন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। যা তদের জন্যও খুব কষ্ট দায়ক। এরপরও তাদের মাঝে কোন প্রকারের কান্তি ও অভিমান নেই।

তাকওয়া ফাউন্ডেশনের যশোর জেলা সমন্বয়ক নাছিম খাঁন বলেন, শনিবার মৃত্যুবরণ করেন মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আমির হোসেনের স্ত্রী বিলকিস আরা বেগম (৭০)। তিনি মৃত্যুবরণ করলে গ্রামের কেউ এগিয়ে আসেননি আমির হোসেনের বাড়িতে। দুপুরে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা তার বাড়িতে গিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

এছাড়া শনিবার সর্বশেষ রাত সাড়ে ১২টার দিকে দাফনের কাজ শেষ করেন দেবিদাসপুর গ্রামের করোনায় মৃত. মিজানুর রহমান (৪৮) এর মরদেহ। এর আগে মোহনপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম (৫৫), কাশিপুর গ্রামের সুফিয়া বেগম (৫২), একই গ্রামের রুহুল কুদ্দুস মন্টু (৫২) এর মরদেহ কাফন-দাফন করেন তারা। এ পাঁচ মরদেহ দাফন করতে গিয়ে তারা হিমশিম খান এবং হাফিয়ে উঠেন। নাছিম খাঁন আরও বলেন, এতো কষ্টর পরও তাদের মাঝে কোন প্রকারের কান্তি এবং অবহেলা নেই। তারা শতষ্ফুঃতভাবে এ মহতি কাজটি করে চলেছেন।

খোঁজ খবর নিয়ে জানাযায়, এ সংগঠনের নাছিম খান যশোরের সমন্বয়ক এবং মাওঃ আশরাফ ইয়াসিন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এছাড়া তাদের সাথে এ অঞ্চলে স্বেচ্ছাশ্রমে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের ২০ জন কর্মী করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের কাফন-দাফনের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তবে এ ২০ জনের মধ্যে ৪ জন নারী কর্মীও রয়েছেন। কাফন-দাফনে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত তারা করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ৩৬ ব্যক্তির মরদেহ দাফন করেছেন।

তাকওয়া ফাউন্ডেশনের কর্মীরা শুধু মুসলিম পরিবারের মৃত. ব্যক্তিদের দাফন করছেননা। তারা জাতি ও সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ ভুলে সুসলিম-হিন্দু পরিবার না দেখেই করোনা আক্রান্ত হয়ে এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের কাফন-দাফনের কাজ করে চলেছেন। তারা মৃত্যুর খবর পেলেই সেখানে ছুঁটে যান।

তাকওয়া ফাউন্ডেশনের এ কাজকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, আমার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারছি তাদের সহযোগীতা করার চেষ্টা অব্যহত রেখেছি। আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছি, তারপরও তাদের সাথে আমি সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাশ্রমে মরদেহ কাফন দাফনের এ কাজকে মহতি কাজ হিসেবে বিবেচিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমি এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের মূল্যায়ন করতে চাই, কিন্তু তারা কোন অবস্থাতেই এ প্রস্তাবে সমর্থন করতে রাজি নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here