প্রদীপ বিশ্বাস, বাঘারপাড়া
যশোরের বাঘারপাড়ায় পদ্মাসেতু রেল প্রকল্পের কাজের কারনে প্রায় ১শত ৫০ পরিবার পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। হাজার হাজার চাষি আমন ফসলের বীজতলা নিয়ে শঙ্কায়। নিজের বসতবাড়ি ছেড়েছে প্রায় ১০০টি পরিবার। বৃষ্টির জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে বাঘারপাড়ার জামদিয়া ও বাসুয়াড়ি ইউনিয়নবাসী। টানা বৃষ্টির প্রভাবে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি বলে জানান এলাকাবাসী।
সরেজমিনে রোববার তেঘরি গ্রামে গেলে দেখা যায়, ডুবে যাওয়া প্রত্যেক বাড়ির উঠানে হাটু বা কোমর সমান পানি। শোয়ারঘর রান্নাঘর গোয়ালঘর ও জ্বালানীঘরে পানি থৈ থৈ করছে। গোয়ালের গরু, ছাগল পানির মধ্যে দাড়িয়ে আছে। কোথাও কোথাও কাঁচাঘরগুলো হেলে পড়েছে। তিন দিন ধরে হাঁস-মুরগিরও কোনো খবর নেই। গ্রামে যাদের উচু বাড়ি তাদের বাড়িতে অনেকে গরু-ছাগল রেখেছে। কিন্তু যাদের এমন সম্পর্ক নেই তাদের গবাদিপশু পানিতেই আছে। এমন চিত্র এলাকার আবু সায়েদ, আলিউল ইসলাম, হাছান, মোহসিন আলি মাষ্টারসহ শতাধিক পরিবারের।
তেঘরি গ্রামের হাছান মোল্লা। বয়স ৬০ বছর। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তার পরিবার। তিন দিন ধরে তারা বাড়ি ছাড়া। তিন ছেলে তিন বাড়িতে আছেন। তিনি বলেন, চাচাত ভাই ইউনুস মোল্লার বাড়িতে আছি। চারটে গরু কামরুল ও রাকিবের বাড়িতে রেখেছি। ছাগলগুলোর কোনো ব্যাবস্থা করতে পারিনি। সেগুলো পানির মধ্যেই আছে।
তিনি আরও বলেন, ঘরের ধান-চাল সরাতে পেরেছি কিন্তু জ্বালানী বাঁচাতে পারিনি। তাই রান্নায় সমস্যায় ভ’গছি। বৌমা রিপা খাতুন বলেন, বাড়ির সব ঘরের মধ্যেই পানি। নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আছি। গরু বাপের বাড়ি পাঠিয়েছি কিন্তু হাঁস-মুরগির কোনো খবর নেই।
একই গ্রামের ওলিয়ার রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার কারনে ১শত ৫০ পরিবার পানিবন্দি। আমার পোল্ট্রিঘর ও গোয়লঘরে পানি। আরদুই দিন বৃষ্টি হলে আমার সবকিছু ডুবে যাবে।
তিনি বলেন, ভিটাবল্লার উপর দিয়ে ছোটভিটাবল্লা, কাজলে বিল, সাইটখালি, দক্ষিণ শ্রীরামপুর, জলেশ্বরসহ ১০ বিলের পানি নড়াইল সদরের গুয়াখোলার খাল হয়ে ভৈরব নদে যায়। কিন্তু নির্মাণাধীন রেললাইনের কারনে পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এখন আমন মৌসুমের বীজতলাও তৈরি করতে পারিনি। দ্রুত পানি নিষ্কাশণ করতে না পারলে আমরা জামদিয়া ইউনিয়নবাসী ক্ষতিগ্রস্থ হবো। যদিও রেললাইন কেটে পানি সরানোর ব্যবস্থা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজের গতি কম। কবে নাগাদ পানি সরবে বুঝতে পারছিনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঘোড়ানাছ গ্রামের হেম চন্দ্র ভৌমিক জানান, রেললাইনের কারনে আমার সবজিক্ষেতসহ বীজতলা ডুবে গেছে। ভাঙুড়া এবং কমলাপুর গ্রামেও একই অবস্থা।
জামদিয়া ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিজন কুমার রায় বলেন, জলাবদ্ধ মাঠে সামান্য কিছু সবজিক্ষেত আছে যা ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে জলাবদ্ধতার স্থায়ি সমাধান না হলে আগামি রোপা আমন চাষের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম টুটুল বলেন, জলাবদ্ধতার বিষয় নিয়ে উপজেলা পরিষদের মিটিং-এ উত্থাপন করি। তখন রেললাইনে একটি কালবার্ট বা ব্রীজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই বলেন। সে মোতাবেক এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিস ও যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনও করে। কিন্তু আট নয় মাস পার হলেও সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়ে জামদিয়ার চেয়ারম্যান সাহেব কয়েকবার আমাকে বলেছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) স্যারকে জানিয়েছি। তাদের পরামর্শক্রমে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পদ্মা রেল সেতু প্রকল্প পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করছি’।