সত্যপাঠ রিপোর্ট
যশোর পৌরসভা ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরও ৭ দিন (২৩ জুনরাত ১২ টা পর্যন্ত) বৃদ্ধি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সাথে যশোর পৌরসভার পাশের ৪টি ইউনিয়ন সহ শার্শা ইউনিয়ন ও ঝিকরগাছা পৌরসভাও ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
‘কঠোর বিধিনিষেধ’ এর নতুন আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে- যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া, উপশহর, আরবপুর, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন, ঝিকরগাছা উপজেলার ঝিকরগাছা পৌর এলাকা, শার্শা উপজেলার শার্শা ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌর এলাকার বেনাপোল বাজার।
এর আগে গেল ৯ জুন দিনগত মধ্যরাত থেকে যশোর ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় ‘কঠোর স্বাস্থ্যবিধি আরোপ’ করা হয়। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে জেলা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
সপ্তাহের মাথায় মঙ্গলবার বিকেলে উল্লিখিত কমিটির সভা বসে। সেখানে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ সময় ও আওতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে কমিটির অন্যতম সদস্য প্রেসকাব যশোর সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এই সময়কালে আগের বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে। জেলার অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীবাস চলবে না। তবে দূরপাল্লার গাড়ি চলবে।
ভারত সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি জেলাকে করোনার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এই জেলাগুলোতে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ মতো কঠোরতা আরোপ করা হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির তেমন উন্নতি দৃশ্যমান নয়।
মঙ্গলবারের সভায় জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, পৌরসভার মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, প্রেসকাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যশোর সদর উপজেলার যশোর পৌরসভা, চাঁচড়া, উপশহর, আরবপুর, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন, ঝিকরগাছা উপজেলার ঝিকরগাছা পৌর এলাকা, শার্শা উপজেলার শার্শা ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌর এলাকার বেনাপোল বাজার এবং অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভায় যেসব বিধিনিষেধ মানতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো-
যশোর জেলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটে গণপরিবহণ/বাস ইত্যাদি বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী/এ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক এবং জরুরি সেবা দানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। সকল প্রকার হাইওয়ে রোডে আন্তঃজেলা গণপরিবহন সরকার কর্তৃক আরোপিত চলমান স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনপূর্বক চলাচল করতে পারবে। তবে আন্তঃজেলা বাস অভ্যন্তরীণ যাত্রী বহন করতে পারবে না, কাঁচাবাজার, ফুল ও নিত্য প্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকান সন্ধ্যা ৬.০০টা পর্যন্ত খোলা ধাকবে।
এছাড়া সকল ধরণের দোকানপাট, শপিংমল, বিপণীবিতান বন্ধ থাকবে। ওষুধের দোকান সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে। আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরসমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি, বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মুদ্রণালয়, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, স্থানীয় সরকারের অধীন অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারি ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভুত থাকবে।
খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা থাকবে। তবে খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরা থেকে কেবল সকাল ৬.০০টা থেকে সন্ধ্যা ৬.০০টা পর্যন্ত খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। সবাইকে অবশ্যই ঘরে অবস্হান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে।
মোটরসাইকেলে চালক ব্যতীত অন্য কোন আরোহী যাতায়াত করতে পারবে না। রিকশায় শুধু ০১ জন এবং সকল ধরণের ইজিবাইক ও অটোরিকশায় সর্বোচ্চ ০২ জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করা যাবে। শিল্প-কলকারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
সকল পর্যটনস্থল, পার্ক, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এমন ধরণের সামাজিক (বিবাহ, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ থাকবে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ২০ (বিশ) জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন। ঘর থেকে ওজু করে সুন্নত নামাজ পড়ে মসজিদে আসবেন। অন্যান্য ধর্মীয় উপসনালয়েও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপসনা করতে পারবে।
সকল জরুরি নির্মাণ কাজ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলমান থাকবে। এ সংক্রান্ত পণ্য পরিবহন বিধি নিষেধের আওতাবহির্ভুত হবে। যশোরের অন্যান্য উপজেলায় উচ্চ সংক্রমণের এলাকা চিহ্ণিত করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি অনুরূপ বিধি- নিষেধ আরোপ করবেন এবং সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিধি-নিষেধ চলমান থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সায়েমুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।