সিপিডির সংলাপ : সরকারি সহায়তা পায়নি ৭৫% অতিদরিদ্র মানুষ

0
205

সত্যপাঠ ডেস্ক

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের মাধ্যমে বেশ কিছু ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। এই ত্রাণ সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে জাতীয় পর্যায়ে বিভাজিত তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে। যদিও ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে করোনা মোকাবেলায় ত্রাণ কর্মসূচি : কতটা কার্যকর ছিল? শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে সিপিডির মূল প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৭৫ শতাংশই সরকারের সামাজিক কর্মসূচির আওতায় দেওয়া সহায়তা পায়নি। অর্থাৎ করোনা মহামারিতে ২৫ শতাংশ অতিদরিদ্র মানুষ সরকারের দেওয়া সহায়তা পেয়েছে। তবে এর বাইরে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল মানুষও সরকারের সামাজিক সহায়তা নিয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলের তুলনায় শহর অঞ্চলে ওই প্রগ্রাম বাস্তবায়ন অপেক্ষাকৃত ভালো হয়েছে। সবচেয়ে কম আয়ের মানুষ বিবেচনায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ১৮.৯ শতাংশ সরকারের দেওয়া ওই সুবিধা পেয়েছে, যেখানে শহর অঞ্চলে সুবিধা পাওয়া মানুষদের সংখ্যা ৪৩.৩০ শতাংশ। প্রযুক্তিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সুবিধা না থাকার কারণে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ করা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে নগদ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তার ১৭ শতাংশ অনেককে ঘুষ বা অন্যান্য খরচ হিসেবে ব্যয় করতে হয়েছে।

তিনটি সামাজিক কর্মসূচির ওপর এই গবেষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য সাহায্য, খাদ্য সাহায্যের জন্য প্রণোদনা ও ২৫০০ টাকা করে ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা। গবেষণায় মোট দুই হাজার ৬০০ জনকে বিবেচনা করা হয়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের দেওয়া সামাজিক কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে এই জরিপের কাজ করা হয়।

সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘করোনা মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ গতবারের চেয়ে ব্যবস্থাপনা ভালো হয়েছে এবং আগের চেয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো অনিয়ম এবং দুর্নীতির সংবাদ আমরা পাইনি। এটুআই এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা সংযুক্ত হয়ে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় প্রায় সাত কোটি মানুষের একটি ডাটাবেইস তৈরি করেছিলাম। এবারও ওই তালিকা অনুযায়ী মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে এবার ৩৩৩ এর সার্ভিসটির মাধ্যমেও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই সার্ভিসটি চালু থাকার কারণে খাদ্যকষ্টে কাউকে ভুগতে হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘যদিও তালিকা টানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটি সব জায়গায় সম্ভব হয়নি। তার পরও আজকের আলোচনা থেকে যেহেতু পরামর্শ আসছে তালিকার তথ্যগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার, তাহলে আরো বেশি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা আগামীতে এ বিষয়টির ওপর আরো বেশি জোর দেব।’

ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের কাছে সার্বক্ষণিক অর্থ মজুদ রেখেছি। যাতে তাঁরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন। আমাদের যে চাহিদা সে অনুযায়ী বিতরণের সামর্থ্য সরকারের নেই। এখনো আমরা উন্নত বিশ্বের মতো হয়নি। যার ফলে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করেছি। যারা অতিদরিদ্র, যাদের খাদ্য সহায়তা খুব বেশি দরকার তাদের মাঝে আমরা বিতরণ করেছি।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, এমপি, বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ‘ত্রাণ বিতরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন, যেন সঠিক মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকারি ও ব্যক্তি সহায়তা প্রদানে উৎসাহ কম রয়েছে। ত্রাণ সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তথ্য প্রচার ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে হবে। ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নজরদারি নিশ্চিত করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যম ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’ অনুষ্ঠানে সম্মানিত বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ। বিশেষ বক্তা ছিলেন আনির চৌধুরী এবং নগদের এমডি তানভীর এ মিশুক। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here