সত্যপাঠ ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে গত দুইদিন ধরে পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে জেলাটির বিভিন্ন উপজেলার বাঁধ ভেঙে গেছে। নদী তীরবর্তী এলাকাসহ নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে। দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।
বৃহস্পতিবার পিরোজপুরের কঁচা, বলেশ্বরসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান, পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান। এদিকে বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পিরোজপুরে দমকা হাওয়া ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেলার মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, নাজিরপুর ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়েছে। পানিতে এসব অঞ্চলের কাঁচা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি মাছের ঘের, ধান, রবি শষ্য ও পানের বরজ নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলায় ১৬৭ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, সাত হাজার ৩১৮ হেক্টর আবাদি জমি, এক হাজার ৩৩৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত, ১৪১ হেক্টর জমির পানের বরজসহ ২১২ হেক্টর বিভিন্ন রবি শষ্যের ক্ষেত সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় জানান, এভাবে আরও এক দুইদিন জোয়ারের পানি থাকলে ডুবে যাওয়া এসব ক্ষেতের ফসল ও চারা নষ্ট হয়ে যাবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমএ বারী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেলার মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, নাজিরপুর ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৫৯৬ হেক্টর জলাশয়ের দুই হাজার ১৫৭টি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষিদের।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে মঠবাড়িয়ার মাঝেরচর, বড় মাছুয়া, পিরোজপুর সদর উপজেলার হুলারহাট এলাকাসহ ইন্দুরকানী ও ভান্ডারিয়া উপজেলার কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভান্ডারিয়ার তেলিখালীতে বেড়িবাঁধের বড় একটি অংশ পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো।
পিরোজপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোজাহারুল হক জানান, নদী তীরবর্তী তিন চার স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। এরমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ১৫ হাজার ৫০০ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবু আলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সারাদেশের মতো পিরোজপুরেও কম-বেশি ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করা হচ্ছে।