সত্যপাঠ ডেস্ক
শিশু আমেনা খাতুনকে (১১) ছোট বেলার বান্ধবী শ্যামলির বাড়িতে এক বছর আগে কাজে দিয়েছিলেন অভাবী মা আকলিমা বেগম। শ্যামলি আকলিমাকে বলেছিলেন- তার ঢাকার বাড়িতে ছোট মেয়েকে দেখাশোনা করবে আমেনা। তেমন কষ্ট হবে না। আর দেওয়া হবে ভালে খাওয়া পরা। অভাবী আকলিমাও মেয়ের ভালো খাওয়া-পরা, ভালো থাকার নিশ্চয়তায় বান্ধবীর বাড়িতে দিয়েছিলেন আমেনাকে। কিন্তু এক বছর পর মেয়েকে যখন ফেরত পেলেন তখন মেয়ের শরীর জুড়ে শুধুই নির্মম নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন। হাত, পা, ঘাড়, পিঠসহ শরীরের সর্বত্র পোড়া ও মারের দাগ।
গৃহকর্তা বাদল ও গৃহকর্তী শ্যামলীর নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে যন্ত্রণায় কাতর শিশুটি এখন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গত ২৫ মে রাতে। তবে ঘটনা জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে। আমেনা যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ভায়না রাজাপুর গ্রামের মৃত নূর ইসলামের মেয়ে।
দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় অমানবিক নির্যাতনের শিকার শিশু আমেনার সাথে। আমেনা বলে, ‘ঢাকায় মায়ের বন্ধু শ্যামলি আন্টির বাসায় কাজ করতাম। তারা ঠিকমতো খেতে দিতো না। চুরি করে খাবার খাওয়ার কথা বলে প্রায়ই তাকে খুন্তি গরম করে ছ্যাকা দিতো শ্যামলী আন্টি। রুটি বেলা ব্যালন দিয়ে মারপিট করতো। গলার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতো গরম চামচ। রড দিয়েও মারতো। শ্যামলী আন্টি ও বাদল আঙ্কেল দুজনেই মারতো। তবে বেশি মারতো শ্যামলি আন্টি। একদিন তারা আমার মুখে টেপ পেঁচিয়ে ছুরি নিয়ে জবাই করার ভয়ও দেখিয়েছে।’
শিশু আমেনার মা আকলিমা বলেন, ‘ছোটবেলায় আমি ও শ্যামলি একসাথেই বাগডাঙ্গা স্কুলে পড়তাম। বছরখানেক আগে আমার বান্ধবী তার ছোট মেয়েকে দেখাশোনার কথা বলে আমার মেয়েকে ঢাকায় তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সে আমার মেয়ের ভালো থাকা, খাওয়া পরার কথা বলে।
তিনি বলেন, আমেনার বাবা মরে গেছে অনেক আগে। আমারও অন্যত্র বিয়ে হয়েছে। মেয়েটি তার নানির কাছে থাকতো। অভাবের সংসার। তাই মনে করেছিলাম বান্ধবির কাছে মেয়েটি ভালো থাকবে। ওর নানি ওকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসার পর দেখি আমার মেয়ের এ অবস্থা। তারপর ওকে হাসপাতালে ভর্তি করি।
এ ব্যাপারে গৃহকর্তা বাদলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে গৃহকর্তা বাদল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা নির্যাতন করিনি। আমরা কভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম। সে সময় গরম পানি দিয়ে গোসল করতাম। সেই গরম পানি নিতে যেয়ে সে ২০/২৫ দিন আগে পুড়ে যায়।’
যশোর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক অজয় কুমার সরকার জানান, মেয়েটির শরীরের বিভিন্নস্থানে পোড়া দাগ আছে। তার বুকে ব্যাথার কথাও বলেছে। তবে শিশুটি এখন আশঙ্কামুক্ত।