এম এম নুর আলম, আশাশুনি
আশাশুনি উপজেলার মরিচ্চাপ নদীর বেইলি ব্রীজের পাটাতন ভেঙে ইট বোঝাই ট্রাক নদীর চরে পড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইট বোঝাই ট্রাক সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় ব্রীজটির পাটাতন ভেঙ্গে পড়ে যায় নদীর চরে। তবে, এসময় ট্রাকে থাকা চার জনের কারও কোন ক্ষতি না হলেও ব্রীজে যাতয়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরা-আশাশুনি মেইন সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে জনদুর্ভোগ চরমে উঠে।
স্থানীয়রা জানান, মরিচ্চাপ নদীর উপর বেইলি ব্রীজটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। পরে সেটি কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চলাচলের উপযোগী করে তোলে। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে ব্রীজের দুই পাশে সাইনবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে ব্রীজের উপর দিয়ে ৫টনের বেশী মালামাল নিয়ে যানবাহন যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারী করলেও ইট ভাটার ট্রাকের চালকরা সেটা মানেন না।
সোমবার সকালে উপজেলার শ্রীকলস গ্রামের আব্দুস সামাদের এমএমবি ইটভাটা থেকে প্রায় ১৮ টন করে ইট লোড নিয়ে ৩ টি ট্রাক সাতক্ষীরার দিকে রওয়ানা দেয়। এসময় স্থানীয়রা সেতুর উপর দিয়ে না যাওয়ার জন্য ট্রাক চালকদের নিষেধ করেন। তারপরও তারা নিষেধ না শুনে ট্রাকগুলো নিয়ে ঐ সেতুুর উপর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ১ম ট্রাক চালক কোন কথা না শুনে চলে যায়। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় ট্রাকটি (যশোর-ট ১১-১৭৬৫) ওই ব্রীজের মাঝামাঝি স্থানে যাওয়ার পর বিকট শব্দে ব্রীজের পাটাতন ভেঙ্গে ইট সহ নদীর চরে আটকে যায়। পরে সেখানে সব ধরনের যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। তবে ব্রীজের সরু বীট দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেটে সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। সমস্ত রকম যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে আছে।
ট্রাক ড্রাইভার সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা এলাকার নাইমুর রহমান জানান, তার ট্রাকে প্রায় ১৩ টন ইট লোড ছিলো। আগের গাড়ীটিতে প্রায় ১৮ টন ইট বোঝাই ছিলো। ওই গাড়ীটি যাওয়ার পরপরই তিনি গেলে দুর্ঘটনায় পড়ে যান। তবে, এতে তাদের কারও কোন ক্ষতি হয়নি।
তিনি আরো জানান, এরকম মালামাল নিয়ে তারা নিয়মিত যাওয়াত করে থাকলেও কোন সমস্যা হয়না। উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা প্রকৌশলী আকতার হোসেন বলেন, ব্রীজটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন। বিষয়টি তারা দেখবেন।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজামউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ব্রীজটির দুই পাশের নির্দেশনা ট্রাক চালকরা না মানার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তাছাড়া সংশ্লিষ্টদের ব্রীজটি দ্রুত মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা মেরামত কাজ শুরু করবেন।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম জানান, মরিচ্চাপ নদীর উপর ব্রীজটি দীর্ঘদিন ধরে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় ছিল। পটি মেরে চলছিল কোন রকমে। ব্রীজের দুই পাশে সাইন বোর্ডে সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় ইটভাটা মালিক আব্দুস সামাদ নির্দেশনা না মেনে ৬ হাজার ইট বোঝাই ট্রাক নিয়ে ব্রীজের উপর ওঠে। এতে ব্রীজটি লোড সহ্য করতে না পেরে ভেঙে পড়েছে। ফলে জেলা শহরের সাথে সড়ক পথে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ব্রীজটি মেরামত করে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করবেন।
এদিকে, স্থানীয়রা দ্রুত এই সেতু সংস্কার করে যাতায়াত ব্যবস্থা সচল করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।