সত্যপাঠ ডেস্ক
মমিন বক্স ছিলেন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। রাজধানীর পল্লবীর ৯ নম্বর ও ১২ নম্বর সেকশনে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতার অভিযোগে স্থানীয় থানায়ই তাঁর নামে ১৮ মামলা। জমি দখল ছিল তাঁর মূল কাজ। পাঁচ বছর আগে এই প্রভাবশালী সন্ত্রাসীর লাশ মেলে কালশী এলাকায়। তাঁর এলাকায় গত ১৫ বছরে খুন হয়েছে আরো ছয়জন। সর্বশেষ গত ১৬ মে পল্লবীর ১২ নম্বর ডি-ব্লকে ৩১ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে একটি গ্যারেজে স্থানীয় জয়নুদ্দিনের ছেলে সাহিনুদ্দিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পল্লবীর সিরামিকের গলির পাশে বুড়িরটেক, টেকেরবাড়িসহ আশপাশে আরো পাঁচজন খুন হয়েছেন। তাঁরা হলেন কলেজছাত্র চঞ্চল, শ্রমজীবী পাগলা খোকন, মুসা, মিন্টু ও আব্বাস।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিরপুরের পল্লবীর বাউনিয়া মৌজায় ১৬৮ একর জমি দখল নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হয়েছেন সাতজন। ৪৭ বছর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহণ করা ওই জমির একটি অংশে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ‘স্বপ্ননগর’ নামে আবাসিক প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পে সরকার ১১ হাজার ২৬৪টি ফ্যাট নির্মাণ করছে। অথচ সেই জায়গায়ই লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এবং তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব আব্দুল আউয়াল প্রভাব খাটিয়ে তাঁর হ্যাভেলি প্রপার্টিজ কম্পানির মাধ্যমে ‘আলীনগর আবাসিক এলাকা’ প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। যেখানে অধিগ্রহণের বাইরে এক ইঞ্চি জমিও নেই তাঁদের। ওই জমিতে দখল ও অধিপত্য বিস্তার করতে স্থানীয় বাসিন্দা ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন আউয়াল। দখল বিরোধে সাত খুনের পাশাপাশি হয়েছে তিন ডজনেরও বেশি মামলা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্থানীয় বাসিন্দা জয়নুদ্দিনের দুই ছেলে সাহিনুদ্দিন ও মাইনুদ্দিনের সঙ্গে কয়েক বছর ধরেই হ্যাভেলি কম্পানির বিরোধ চলছিল। মাঝে সাহিনুদ্দিন হ্যাভেলির সঙ্গে সমঝোতা করলেও সম্প্রতি তাঁদের ১০ একর জমির দখল ফেরত চাইছিলেন। দখল টিকিয়ে রাখতে আউয়াল ও তাঁর কম্পনির মহাব্যবস্থাপক আবু তাহের দুই ডজনের বেশি সন্ত্রাসীকে পুষছেন। স্থানীয়দের মধ্যে যারা অপরাধ কর্মকা- করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তাদেরই দলে ভেড়ায় হ্যাভেলি। জমি দখল সিন্ডিকেটের প্রশ্রয়ে এলাকাটি ইয়াবা কারবারি, ছিনতাই ও ডাকাতিতে জড়িতদের অভয়রাণ্যে পরিণত হয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন বেপারী ছাড়াও পল্লবী সেকশন-১২ ডুইপনগরের দিপু গ্রুপ, সিরামিকস এলাকার রাজন গ্রুপ, টেকেরবাড়ির আবুল গ্রুপ এবং ইয়াবা বাবু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের প্রতি মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতখরচ দেন আউয়াল। নিজেদের প্রয়োজনে দখলদাররা কথিত মালিকদের দিয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও করাচ্ছে। অধিগ্রহণ করা জমি মেপে গৃহায়ণ খুঁটি বসালেও সেসব খুঁটি সরিয়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা।
দখলদারিতে খুনের জনপদ
২০১৫ সালের ৮ জুলাই মোহাম্মদপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের টেকেরবাড়ির সামাদ বক্সের ছেলে মমিন বক্সকে। চার দিন পর কালশী ব্রিজ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়। হ্যাভেলি প্রপার্টিজের হয়ে কাজ করা সন্ত্রাসী মমিন বক্সের সঙ্গে চাচাতো ভাই আমানউল্লাহ ও সাগুফতা প্রপার্টিজের বিরোধ ছিল। কয়েক বছর আগে আমানউল্লাহকে গুলি করে ১২ নম্বর সেকশনের ধ-ব্লকের সন্ত্রাসী মামুনের সহযোগী রানা। এরপর মামুনের সঙ্গে আঁতাত করে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় আমান। তখন আউয়ালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। অন্যদিকে সাগুফতার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুয়েল মোল্লার ঘনিষ্ঠ ছিলেন আমান।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, হ্যাভেলি প্রপার্টিজের সঙ্গে সাবেক জমির মালিক জয়নুদ্দিনের ছেলে মাইনুদ্দিনের বিরোধ চলছিল। তাঁদের জমি থেকে সরাতে হুমকি দিচ্ছিলেন মমিন। উল্টোদিকে মাইনুদ্দিনের পক্ষ নেন আমান। ২০১৫ সালের ১৪ মে বুড়িরটেকে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বঙ্গবন্ধু কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র চঞ্চলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলায় মমিনকে আসামি করেন চঞ্চলের ভাই সাইফুল ইসলাম। মমিন বক্স খুনে প্রথমে সাইফুলকেই আসামি করে নিহতের স্বজনরা। পরবর্তী সময়ে চঞ্চলের মা সালমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে খুন করেছে বিল্লাল ও খলিল নামের দুই সন্ত্রাসী, তারা এখনো ধরা পড়েনি।’
মমিনের ছোট ভাই আতিক বক্স বলেন, দুই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আমান। তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী মমিনের জমি ও মাছের ঘের দখল করে নিয়েছে। চঞ্চল খুনের পর অন্য একটি মামলায় আমান পুলিশের হাতে ধরা দেন। আমান পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় মমিনকে খুন করা হয়, যেন কেউ আমানকে সন্দেহ করতে না পারে। পরে আসল রহস্য জেনে পল্লবী থানার দুই এসআই, আমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বজনরা। আমানের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণসহ ১৪টি মামলা আছে। মমিন হত্যা মামলায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গাড়িচালক সোহেল ও স্থানীয় হায়দারকে গ্রেপ্তার করেছে।
অনুসন্ধানকালে স্থানীয়রা জানান, মমিনের প্রতিপক্ষের তিনজন রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছিল। এর মধ্যে মাছের খামারের পাগলা খোকন ও ডি-ব্লকের মিন্টু অন্যতম। গৃহায়ণ প্রকল্পের মধ্যে মাছের খামারেই পাওয়া যায় পাগলা খোকনের লাশ। পরে জলাধারটি দখল করেন মমিন। খোকনের ভাই বাবুল বলেন, ‘ঝামেলা আছে, এসব বিষয় আমি জানি না। বলাও ঠিক হবে না!’
প্রায় সাত বছর আগে কালাপানির মুসা খুন হয়। এর আগে ডিওএইচএস সড়কে খুন হয় পাকিস্তানি মোহাম্মদ আলী। মুসা গংই তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। তবে এই দুই পক্ষই জমি দখল চক্রে জড়িত ছিল। মুসা ছিল মমিনের ঘনিষ্ঠ।
২০০৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সিরামিকের পেছনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আব্বাস নামে এক যুবককে। স্থানীয় ইদ্রিস আলীর ছেলে আব্বাস পুলিশ-র্যাবের সোর্স হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বুড়িরটেকের বাসায় গেলে আব্বাসের ছোট ভাই আক্কাস বলেন, জমি দখলে নিতে হত্যা করা হয় আব্বাসকে। তখন চাঁদপুরের হাইমচরের একটি গ্রুপ ওই বস্তিতে বসবাস করছিল। পঞ্চা, অখিল, নীলকান্ত, স্বপন, সাত্তারসহ কয়েকজন মিলে হত্যা করে আব্বাসকে। অথচ পুলিশ এসে বস্তির সাধারণ লোকজনকে গ্রেপ্তার করে। এই কৌশলে খালি করা হয় বস্তি। অভিযোগ করলে নিহত আব্বাসের ভাইদের বিরুদ্ধে ১৩টি মিথ্যা মামলা করা হয়! এরপর আব্বাস হত্যা মামলার খোঁজই নেয়নি পরিবার। স্বজনরা ভয়ে মুখ না খুললেও এক প্রতিবেশী বলেন, মূলত ওই সময়ই আউয়াল হ্যাভেলি কম্পানি করে বুড়িরটেকে তাঁদের দখলদারি শুরু করে। প্রভাবশালী ওই দখলদারদের সঙ্গে আঁতাত করে জয়নুদ্দিনের ছেলেরা, ক্যাডার মমিন বক্স ও আমান। আব্বাস হত্যায় হিন্দু আসামিরা জামিন পেয়ে দেশ ছেড়েছে, পুলিশের সোর্স সাত্তার আছে এলাকায়ই।
সাহিনুদ্দিন যেভাবে টার্গেটে
স্থানীয়রা বলেন, জয়নুদ্দিনের ছেলে মাইনুদ্দিন হ্যাভেলির আউয়াল ও তাঁর সহযোগী আবু তাহেরের সঙ্গে বিরোধে জড়ালেও সাহিনুদ্দিন সমঝোতা করে চলছিলেন। কয়েক বছর ধরে তাঁদের অধিগ্রহণ করে নেওয়া জমি (যেটির মালিকানা দাবি করছেন) আলীনগর প্রকল্পে দিতে আউয়ালের প্রস্তাবে রাজি হন তিনি।
সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম অবশ্য বলেন, উত্তর কালশীর বুড়িরটেকের আলীনগর এলাকায় তাঁদের প্রায় ১০ একর জমি আছে। হ্যাভেলির দখল থেকে ওই জমি রক্ষায় তাঁর স্বামী জয়নুদ্দিন বাদী হয়ে ঢাকার প্রথম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা (ঢাকা দেওয়ানি মামলা নং-১১৮/১৫) করেন। ছেলেরাও জমি দখল চায়। এতে আউয়াল ক্ষুব্ধ হয়ে সুমনকে দিয়ে গত বছরের নভেম্বরে সিরামিক ২ নম্বর গেটের সামনে প্রথম দফায় সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। তখন মামলা করলে সুমনসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। জেল থেকে বের হয়ে একই চক্র তাকে হত্যা করেছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আউয়ালের দখলদারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আরো অনেকে। সম্প্রতি মোস্তফা কামাল নামে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার জমি দখল করার চেষ্টা করে আউয়াল বাহিনী। এক পর্যায়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা না পেয়ে জমিতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা। গত ৭ মে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন মেজর (অব.) মোস্তফা কামাল। সাহিনুদ্দিনরা ওই ঘটনায় মোস্তফা কামালের পক্ষ নেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় আউয়াল গ্রুপ।
ডিবি পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-মিরপুর) মানস কুমার পোদ্দার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জমির বিরোধের জেরে সাহিনুদ্দিন খুন হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষ খুনিরা শনাক্ত। এর পেছনে কী আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের মামলাগুলোর চার্জশিট হয়ে গেছে।’
অধিগ্রহণের জমিতেই রাজত্ব!
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, মিরপুরের বাউনিয়া মৌজার সিএস ৩১২৪ এবং ৩১২৭ নম্বর দাগের সব জমি এলএ কেস নম্বর ৫/৭২-৭৩-এর মাধ্যমে অধিগ্রহণ করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। ১৯৯০ সালের ৩০ এপ্রিল জেলা প্রশাসন তৎকালীন গৃহসংস্থান অধিদপ্তরকে ওই জমি হস্তান্তর করে। পরবর্তী সময়ে মিরপুরের ৯ নম্বর সেকশনের ওই জমি দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ওই দুটি দাগের জমির ওপর দিয়ে ১২০ ফুট প্রশস্ত কালশী-ইসিবি-ডিইউএইচএস-১২ নম্বর সড়ক চলে গেছে। নোটিশ দেওয়ার পর ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় আলীনগরের পাশে রশিদেরটেকে উচ্ছেদ অভিযান চালায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। সেখানে ২০ একর সরকারি জমি খালি করার পর এক হাজার ৫৬০টি ফ্যাট নির্মাণের জন্য মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। ৯ নম্বর সেকশনে পুরো ১৬৮ একর জমির ওপর সরকারি ১১ হাজার ২৬৪টি ফ্যাট নির্মাণের প্রকল্প চলছে। রাতের আঁধারে পাশের সীমানা পিলার গায়েব করে ফেলে ভূমিদস্যুরা।
ওই এলাকায় সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে গেলে গণপূর্তের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (মিরপুর) জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৮টি মামলা করে সাজানো জমির মালিকরা। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে বদলি করা হয় জিয়াউরকে। তিনি এখন মোহাম্মদপুরে কর্মরত। জানতে চাইলে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘হ্যাভেলির দখলে এখনো অনেক জমি আছে। প্রকল্পের এলাকা অনুযায়ী কিছু আমি উদ্ধার করেছিলাম। ফ্যাট প্রকল্পের থার্ড ফেজের কাজের সময় আরো জমি পড়বে। যেসব সাজানো মামলা করেছে তাতে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ জিতেছি। আমি ওখান থেকে চলে এসেছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
সূত্র জানায়, বুড়িরটেকের প্রবীণ বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর নামেই আলীনগর নামকরণ করে আউয়ালের হ্যাভেলি প্রপার্টিজ। মোহাম্মদ আলীর ১০ ছেলে ও দুই মেয়ে ওই জমির মালিক ছিলেন। তাঁদের ছয়জন এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এখনো বসবাস করছেন জয়নুদ্দিন (খুন হওয়া সাহিনুদ্দিনের বাবা) ও সামসুল আলমের পরিবার। জয়নুদ্দিনের ছেলে মাইনুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এই জমি সরকার অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। পুনর্বাসন সুবিধা এবং অধিগ্রহণ অবমুক্তি পাওয়ার আশায় আমরা আছি। উচ্ছেদ করলে চলে যেতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আউয়াল সাহেবকে আমরা জমি অবমুক্ত করার জন্য পাওয়ার দিয়েছিলাম। তিনি এখানে দখল করে অবৈধ কম্পানি খুলে বসেছেন। এই দখলের জন্যই এত খুনাখুনি হয়েছে।’
সূত্র : কালের কণ্ঠ