মণিরামপুর প্রতিনিধি
যশোরের মণিরামপুরে পুকুর খননে অনিয়মের পর এবার সেই উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল ইসলামের বিরুদ্ধে পাকা সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার গোপীকান্তপুর-ঘিবা গ্রামে প্রায় এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে কার্পেটিং করার চার দিন পার হলেও পাথর জমাট বাঁধেনি। সামান্য আঘাঁতেই পিচ উঠে যাচ্ছে।
কাজের তদারকি কর্মকর্তা উপ-প্রকৌশলী বললেন, তিনি কিছুই জানেন না। তবে, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আনিছুজ্জামান জানালেন, তিনি উক্ত বিষয়ে অবগত আছে। ফলে ভালভাবে পুনরায় কাজ সম্পন্ন না করলে বিলের ছাড়পত্র দেয়া হবে না।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানাগেছে, বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের (এজেআরআরআইডিপি) আওতায় ২০১৯ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে মোতাবেক যশোর চাঁচড়া চেকপোস্ট এলাকার মেসার্স স্বজল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে এবং এক কোটি ৬২ লাখ ৫৪ হাজার প্রাক্কলন ব্যয় ধরে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বরে কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়। যার শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট। কিন্তু কাজ না করেই বার বার সময় নিয়ে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল কার্পেটিং-এর কাজ শেষ করা হয়।
এ কাজ বাস্তবায়ন করেন মণিরামপুর উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল ইসলাম। এই নেতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি একই এলাকায় দু’টি পুকুর খনন নিয়েও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে, মেসার্স স্বজল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধর সেলিম হোসেন জানান, তার লাইসেন্স নিয়ে কাজটি করেছেন মণিরামপুরের কৃষকলীগ নেতা আবুল ইসলাম। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে তিনিই ভাল বলতে পারবেন। সরেজমিন গেলে দেখা যায়, সড়কে সামান্য আঘাঁতেই পিচ উঠে যাচ্ছে। এমনকি মোটরসাইকেল চালিয়ে গেলেও সড়কের কোন কোন জায়গা থেকে পিচ উঠে গিয়ে চাকার সাথে লেগে যাচ্ছে।
সাধারণত ১৬০/১৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পিচ গলিয়ে মিশ্রন করে কার্পেটিং করার কথা। কিন্তু পিচ বাঁচাতে বেশি লাভের আশায় অধিক তাপমাত্রায় গলিয়ে (পিচ) কার্পেটিং-এর কাজ করায় আঠা না থাকায় এর অন্যতম কারন বলে জানাগেছে। এছাড়া বেজ, সাববেজ, ম্যাকাডমেও নিন্মমানের ইটের খোয়া, বালু ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে, কৃষকলীগ নেতা আবুল ইসলাম বলেন, সড়কের পিচ উঠে যাবার বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। স্থানীয় আব্দুল লতিফ নামের এক বয়োবৃদ্ধ ক্ষোভ করে বলেন, তিনি আশা করেছিলেন বর্তমান সময়ে রাস্তার কাজটি ভাল হবে। কিন্তু এখন পিচ যেভাবে উঠে যাচ্ছে তাতে রাস্তা ১/২ মাসও যাবে না।
জানাযায়, পাকা সড়কের কাজটির তদারকির দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাক আলী মোর্তুজা। এক প্রশ্নের জবাবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাক আলী মোর্তুজা বলেন, এমন ঘটনা তার জানা নেই। তিনি এ বিষয়ে আজ ৪ মে মঙ্গলবার পরিদর্শনে যাবেন। জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আনিছুজ্জামান বলেন, তিনি বিষয়টি দেখেছেন, কাজ পুনরায় ভাল ভাবে না করা পর্যন্ত কোন বিল ছাড় করা হবে না।