সত্যপাঠ ডেস্ক
একদিকে করোনা মহামারীর কারণে রফতানিজাত চিংড়ির দাম নেই, অন্যদিকে তাপদাহ ও ভাইরাস লেগে ঘেরের মাছ মরে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে চিংড়ি চাষে এমন বিপর্যয়ে সাতক্ষীরার অধিকাংশ চাষী সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ভাইরাস না ঘেরে পানি স্বল্পতা ও অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে চিংড়ি মরছে। তাছাড়া জেলার অধিকাংশ চিংড়িচাষী মৎস্য বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ না করায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চিংড়িচাষী মো. সামছুর রহমান জানান, উৎপাদনের শুরুতে তার ৩০০ বিঘার ঘেরে ব্যাপক হারে চিংড়ি মরে যাচ্ছে। কোনো কিছুতেই চিংড়ির মড়ক রোধ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে যেমন চিংড়ির দাম নেই, তার ওপর ঘেরে চিংড়ি মরে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। ফলে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সরাপপুর গ্রামের চিংড়িচাষী রাজেস্বর দাশ জানান, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪০০ বিঘা আয়তনের ঘেরে চিংড়ি চাষ করেছেন। কিন্তু চিংড়ি যখন ৭০-৮০ পিসে যখন কেজি বা গ্রেড হচ্ছে, তখনই ভাইরাস লেগে মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর আম্পান ও করোনাভাইরাসের কারণে দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মতো লোকসান তার। ধারণা ছিল চলতি মৌসুমে ঘেরের পরিবেশ ভালো যাবে এবং গত বছরের লোকসান উঠে আসবে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে যেভাবে চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে তাতে এবারো ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন তিনি।
প্রান্তিক চিংড়িচাষী দেবহাটা উপজেলার বিলশিমুলবাড়িয়া এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছর ৬৫ বিঘা পরিমাণ ঘেরে চিংড়ি চাষ করে ৯ লাখ টাকা লোকসান হয় তার। তিনি বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘেরের ৯০ শতাংশ চিংড়ি মরে যায়। চলতি উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে একইভাবে ঘেরের মাছ মরে সাফ হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য কর্মকর্তাদের কাছে পরামর্শ নিতে গেলে তারা চিংড়ি ঘেরে ভাইরাসের উপস্থিতি স্বীকার করেন না।
চিংড়িচাষী সামছুর রহমান, রাজেস্বর দাশ বা রফিকুলের মতো জেলার ৮০-৯০ শতাংশ চিংড়ি ঘেরে মাছ মরে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চিংড়িচাষীরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ চিংড়িচাষী সমিতির সাবেক সভাপতি ডাক্তার আবতাফুজ্জামান বলেন, ভাইরাসের চেয়ে অপরিকল্পিতভাবে ঘের করার কারণে চিংড়িচাষীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, চিংড়ি ঘেরে চার-পাঁচ ফুট পানি থাকার নিয়ম থাকলেও সেখানে দুই-আড়াই ফুটের বেশি পানি থাকে না। তাছাড়া একেকটি ঘেরে ৩০-৪০ বছর ধরে চাষ করা হচ্ছে। এসব ঘেরের তলা পরিষ্কার করা হয় না কখনো। ফলে পর্যাপ্ত জীবাণু সৃষ্টি হয়ে পানি নষ্ট হয়ে যায়।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব জানান, করোনার আগে যে চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার দরে বিক্রি হতো তা এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা। তবে বড় সাইজের মাছ খুবই কম উঠছে বাজারে। তিনি বলেন, গ্রেড হওয়ার আগেই ঘেরে মরে যাওয়ার আশঙ্কায় চাষীরা ৭০-৮০টায় কেজি এমন চিংড়ি ধরে বিক্রি করছেন।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমের জন্য সাতক্ষীরা জেলার ছয়টি উপজেলায় সরকারিভাবে রফতানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার টন, যা গত ২০১৯-২০ মৌসুমের তুলনায় দুই হাজার টন বেশি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, শুধু ভাইরাসের কারণে নয়, জেলার অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরে পানি স্বল্পতার পাশাপাশি অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় মূলত চিংড়ি মরে যাচ্ছে। চাষীদের ঘেরে পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি যথাযথ নিয়মে চিংড়ি চাষ করতে পরামর্শ দেয়ার পরও তা মানছেন না তারা।