সত্যপাঠ রিপোর্ট
যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া দশ করোনা রোগীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের শনাক্ত করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে এবং তারা যশোর জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে। রাতের মধ্যে তাদের হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে, ভারত ফেরত রোগীরা পালিয়ে যাওয়ায় করোনার ভারত ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক ও নাগরিক কমিটির নেতারা।
করোনার মহামারির কারণে ভারত ফেরত করোনা পজেটিভ রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রেখে চিকিৎসার নির্দেশ ছিল সরকারের। সে মোতাবেক বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সদস্যরা করোনার পজেটিভ রোগীদের যশোর জেনারেল হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে পাঠান। হাসপাতালে ভর্তি ১০জন রোগী শনিবার ও রোববারের মধ্যে যেকোনো সময় পালিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে স্বীকার না করলেও পরবর্তীতে জানায়, ভারত ফেরত ৭জন ও স্থানীয় ৩জন করোনা পজেটিভ রোগী পালিয়ে গেছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, করোনা রোগীরা জরুরি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর ওয়ার্ডবয় তাদের সাথে করে করোনা ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছিলো। ওয়ার্ডে পৌঁছানোর আগেই তারা পেছন থেকে পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর তাদের ফিরিয়ে আনতে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়।
এদিকে, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জানার পর তারা পলাতক রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তাদের শনাক্তে কাজ শুরু করেন। আজ সোমবার দুপুরের পর তাদের সকলকে শনাক্ত করা হয়। এরপর তাদের স্ব স্ব জেলার স্বাস্থ্যবিভাগের জিম্মায় দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে আনা হচ্ছে। একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা পথে রয়েছেন। রাতের মধ্যে তারা ভর্তি হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন কথা বলতে রাজি না হলেও বিএমএ যশোরের সভাপতি ডা. কামরুল ইসলাম বেনু বলেন, করোনা রোগী পালানো খুবই উদ্বেগজনক। আমরা দেখছি সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমণে এখন ভারত শীর্ষে। আর সেখানে নতুন যে ভেরিয়েন্ট দেখা দিয়েছে সেটি তিনশ’ গুণ বেশি সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে। ফলে, যারা পালিয়েছে তাদেরতো দায়িত্ববোধ নেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় বিচরণের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে এনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা উচিৎ এবং আগামীতে যাতে এমন না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা পালিয়েছেন কেবল তাদের ফিরিয়ে আনলে হবে না। এরমধ্যে তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছে, তাদেরও কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনতে হবে। নইল করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি বা ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার একটি শংকা থেকেই যাবে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের তথ্য মতে, চলতি মাসে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত ফেরত মোট ২৭জন করোনা রোগীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসা ১০জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে গত ১৮ এপ্রিল একজন, ২৩ এপ্রিল ৫ জন এবং ২৪ এপ্রিল একজন রোগী আসেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসার পর তাঁদের ভর্তি করা হয়। এরপর ভর্তির টিকিট নিয়ে তাঁদের হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁরা ওয়ার্ডে না গিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া রোগীরা হলেন, যশোর শহরের পশ্চিম বারান্দিপাড়া এলাকার বিশ্বনাথ দত্তের স্ত্রী মণিমালা দত্ত (৪৯), সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপপাড়া গ্রামের জালাল হোসেনের ছেলে মিলন হোসেন (৩২), কালিগঞ্জ উপজেলার মনতোষ সর্দারের স্ত্রী শেফালি রাণী সদ্দার (৪০), রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের নাসিমা আক্তার (৫০), খুলনা সদর উপজেলার কলিম কৃষ্ণের ছেলে বিকেকানন্দ(৫২), পাইকগাছা উপজেলার ডামরাইল গ্রামের আহমদ সানার ছেলে আমিরুল সানা (৫২) এবং রূপসা উপজেলার শের আলী সরদারের ছেলে সোহেল সরদার (১৭)।