বাঘারপাড়া প্রতিনিধি
যশোরের বাঘারপাড়া সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে এবার মনগড়া রিপোর্ট ডেলিভারির অভিযোগ উঠেছে। এমবিবিএস প্যাথলজিস্ট ডাক্তার না থাকায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে রিপোর্ট করানো হচ্ছে। রিপোর্টে এমটি ল্যাবের একটি মাত্র স্বাক্ষর দিয়েই রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে রিপোর্টের সত্যতা যাচাই হচ্ছে না। অনেক সময় ভুয়া রিপোর্ট হিসেবেও গণ্য হচ্ছে। এ রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে রোগীরা পড়ছেন বিপদে। প্রতিকার পাচ্ছে না তারা। একের পর এক অভিযোগ উঠছে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযান চালালেও তবুও থেমে নেই তাদের অনিয়ম প্রতারণা। কৌশল পাল্টে নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, মুহুর্তের মধ্যে তড়িঘড়ি করে রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে ইসিজি করানো, স্থানায়ী শিল্পী (গায়ক) দিয়ে এক্সরে টেকনোলজিস্টের কাজ করানো, সেমিপাকা-টিনশেডের ঘরে কার্যক্রম পরিচালনাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির বিরুদ্ধে।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল সিটি ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে অনিয়ম প্রতারণা সহ একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে আসেন যশোর সিভিল সার্জনের একটি টিম। ঘটনা তদন্তে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটিও গঠন করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্য কিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ থাকায় সব রোগীরাই সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে প্যাথলজিকাল পরীক্ষা করাচ্ছেন। পরীক্ষা পত্রে শুধুমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) এর স্বাক্ষর দেওয়া হচ্ছে। এমনকি পরীক্ষা পত্রের শেষে দু’জন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের নাম থাকলেও একজনের স্বাক্ষর করা হচ্ছে। নাজমা খতুন নামে এক রোগীর সিবিসি, ইউরিন, ভিটাল টেষ্ট পরীক্ষায় এমন চিত্র দেখা গেছে। নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক পরীক্ষার পত্রে কোনো ত্রুটি আছে কি না সেটি সনাক্ত করার জন্য একজন এমবিবিএস ডাক্তারকে প্রদর্শন করে তাঁর সিল স্বাক্ষর নাম সংযুক্ত করে রোগীদের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। সেই সাথে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) তাদেরও স্বাক্ষর সংযুক্ত করতে হবে। কিন্তু ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ নিয়ম না মেনে তাদের ইচ্ছামত মনগড়া রিপোর্ট রোগীদের নিকট ডেলিভারি দিচ্ছেন।
সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবুল কাশেমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মফস্বল এলাকায় এমবিবিএস প্যাথলজিস্ট থাকে না, পরে কথা বলছি এই বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’
সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আরেক পরিচালক যুধিষ্টির মন্ডল জানিয়েছেন, ‘এমফিল করা ডাক্তার যশোরের ভিতর দু’একজন আছে। সাধারণত আমাদের নরমাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাবের মাধ্যমে রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই মুহুর্তে কোনো কিছু বলা যাবে না। তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন জানিয়েছেন, পরীক্ষা সাধারণত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরাই করে। এমবিবিএস প্যাথলজিস্ট ডাক্তাররা রিপোর্ট চেক করে দেয়। দেখতে হবে রিপোর্ট ঠিক হচ্ছে কিনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়ম করলে ছাড় হবে না।