অনুমোদনহীন ক্লিনিকের ছড়াছড়ি : মণিরামপুরে ক্লিনিকে প্রসূতি মায়ের সিজারের পর নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

0
176

 

মিজানুর রহমান, মণিরামপুর

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে অনুমোদনহীন ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গড়ে তুলে প্রতিনিয়ত চলছে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা।

এসব ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স না থাকলেও অনায়াসে করা হচ্ছে গর্ভধারিনীদের সিজার।

ক্লিনিক মালিক ও দালালচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। প্রতারণার মাধ্যমে এ সব ক্লিনিকে সিজার করা হলে নানা জটিলতার পাশাপাশি নবজাতকসহ প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া, বিতর্কিত কয়েকজন ক্লিনিক মালিকের অর্থ হাতানোর ব্যবসা মন্দা হওয়ায় ক্লিনিকের সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে চালানো হচ্ছে নানা অপকর্ম।

জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বললেন, মণিরামপুরের অধিকাংশ ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় বৈধতা না থাকায় মালিকদের একাধিকবার জরিমানাসহ ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার জনৈক এক গর্ভবতী নারীর প্রসব বেদনা উঠলে তাকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নেয়া হয় স্থানীয় মর্ডান হসপিটালে। সেখানে সিজারের পর জন্ম হয় এক কন্যা সন্তানের। জন্মের পর পরই ওই নবজাতক গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে যশোর আড়াই’শ শয্যা হাসপাতালে।

সেখানে রাত সাড়ে নয়’টার দিকে কন্যা নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বেরিয়ে আসে গর্ভবতী নারীদের প্রতারণার মাধ্যমে সিজার করিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ।

জানাযায়, উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকায় ১০ শয্যার মর্ডান হসপিটালটি ২০২০ সালে চালু করা হলেও অনুমোদন ছাড়াই সেখানে চলছে নানা অপচিকিৎসা। নেই কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

নামমাত্র চিকিৎসক দিয়ে নিয়মিত গর্ভবতী নারীদের সিজার করে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের অর্থ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মর্ডান হসপিটালের পরিচালক আমিরুজ্জামান বলেন, ইতিপূর্বে বৈধ কাগজ-পত্র ছিল। বর্তমানে ক্লিনিকের কার্যক্রম চালাতে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলসহ পৌর এলাকায় একাধিক ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় বৈধতা না থাকলেও প্রতারণার মাধ্যমে চিকিৎসার নামে ক্লিনিক মালিক ও দালালচক্র মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে চলেছে। এসমস্ত ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মধ্যে কয়েকটিতে ইতিপূর্বে অপচিকিৎসার কারণে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুসহ নানা অঘটনের অভিযোগে ক্লিনিক মালিকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপ কুমার বসু বলেন, উপজেলায় ১৭টি কিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে মাত্র ৩টি ক্লিনিকের অনুমোদন রয়েছে।

বাকিগুলোর মধ্যে কাগজপত্রের ত্রুটি ও প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় সম্প্রতি ৫টি ক্লিনিকে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায়সহ ক্লিনিক সিলগালা করা হয়।

জানতে চাইলে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রারানী দেবনাথ বলেন, রাজগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত মর্ডান হসপিটালের অনুমোদন না থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি, তারপরেও আমি খোঁজ নিচ্ছি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, শুধু নবজাতকের মৃত্যু নয়, চিকিৎসার নামে যে কোন অপচিকিৎসার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here