-সৈয়দ মজনুর রহমান
১৯৪৮ সালের কথা আমার বয়স যখন ৩/৪ বছর তখন আমি কালাজ্বর এ আক্রান্ত হয়ে আড়াই বছর ভূগছিলাম।মা বলছিলেন আমার দেহ শুকিয়ে কংকালসার। মা বলতেন পেটের নাড়ী ভূড়ী নাকি দেখা যেত।কেউ বলতো পেচা পেচী,কেউ বলতো পিচাশ তো কেউ বলতো জ্বীনের আছর।জ্বর বাড়লে মাথায় পানি আর গ্রাম্য কবিরাজের জোলাপ বা হুজুরের দোয়া তাবিজ পানি পড়া।দুচার ক্রোশের মধ্যে ডাক্তার ছিলো না।বাবা কোলকাতা থেকে ছুটিতে বাড়ীতে এসে অবস্হা দেখে কারো কথায় কান না দিয়ে নৌকা ভাড়া করে আমাকে নিয়ে প্রায় দশ ক্রোশ দুরে নতুন একজন ডাক্তার কোলকাতা থেকে সদ্য এমবিবিএস পাশ করে গ্রামে এসে বসেছেন তার কাছে নিয়ে গেলেন।ডা:বাবু রক্ত পরিক্ষা করে কালাজ্বর এর জীবনু পেয়ে ইনজেকশন প্রেসকিপশান করলেন।সেইমত অনেকগুলি ইনজেকশন দেয়ার পরে ধীরেধীরে সুস্হ হলাম তাই সুস্হ সবল দেহে আজও জীবিত আছি।
তাই বলছিলাম সমাজের কালাজ্বর হচ্ছে লুটেরা পুজিবাদ এই রোগ বিখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডারিক্স এঙ্গেলস বহু আগেই অনেক গবেষনা করে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে ধরে ফেলেছেন এবং এর ইনজেকশান ও বাতলে দিয়েছেন।সেটা হচ্ছে সমাজ বিপ্লব। বিপ্লবের মাধ্যমে পুজিবাদী সমাজ বদলে সব মানুষের মুক্ত সমাজ সমাজতন্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করা। তিনি দেখিয়েছেন ধনতান্ত্রিক সমাজে সবাই মিলে উৎপাদন করে আর শ্রমজীবি মানুষের শ্রমফল কালাজ্বরের রক্তচোষা জীবানুর মত মুনাফার নামে চুষে নিয়ে সব সম্পদ সুখ শান্তি উন্নত জীবন বিত্ত বৈভবের অধীকারি হয় গুটি কয়েক পুজিপতি আর তাদের পা চাটা কতিপয় দালাল।তাই এমন সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেখানে সবাই মিলে উৎপাদন করবে সবাই মিলে ভোগ করবে।কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির হাতে উৎপাদন যন্ত্রের মালিকানা থাকবে না।বাড়তি সম্পদ সমাজের কল্যানে মানুষের উন্নত জীবনের জন্য হাসপাতাল,স্কুল কলেজ,নতুন কলকারখানা, বিশ্বিদ্যালয়,রাস্তাঘাট রাষ্ট্রিয় ইমারত,প্রতিরক্ষা,জ্ঞান বিজ্ঞান গবেষনা ইত্যাদি খাতে ব্যায় করবে সরকার,অন্ন বস্ত্র চিকিৎসা শিক্ষা বাসস্হানের দায়িত্ব নেবে সরকার সমাজে থাকবে না মানুষের উপর মানুষের শোষন,থাকবে না আকাছোঁয়া বৈষম্য।যেই ব্যাবস্হা ভীত্ তৈরী করবে ভবিষ্যতের শ্রেনীহীন সাম্যবাদী সমাজের।এরই নাম সমাজতন্ত্র।অন্যথায় পানি পড়া তাবিজ কবজ গ্রাম্য কবিরাজী জোলাপ বা মাথায় পানি ঢেলে বা আবেদন নিবেদন দরখাস্ত পিটিশান অর্থাৎ ত্রান,দাতব্য সাহাজ্য, রিলিফ,প্রনোদনা বেতন বৃদ্ধি এসবে সাময়িক কিছু কষ্ট লাঘব হলেও আমার শৈশবের মত হাড় জিরজিরে হয়ে বাচা যাবে তবে রক্তচোষা পুজিবাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।
অতএব অবশ্যম্ভবী সেই সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃত্বে কৃষক মধ্যবিত্ত এমনকি দেশপ্রেমিক সাম্যাজ্যবাদ বিরোধী দেশীয় শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা সহ দেশপ্রেমিক সব গনতান্ত্রিক শক্তি এবং সকল শোষিত শ্রেনী পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে জনগনতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রস্তুুতির জন্য অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে পুজিবাদী উৎপাদন সম্পর্ক যেমন সমাজের সকলে মিলে উৎপাদন ব্যাক্তি বা গেষ্ঠি কতৃক সুফল আত্মসাৎ এই ব্যাবস্হা ভেঙ্গে দিয়ে তার জায়গায় সবাই মিলে উৎপাদন সবাই মিলে ভোগ এমন নুতন উৎপাদন সম্পর্ক গড়তে।এতে শোষক গোষ্ঠি বাধা দিলে শোষিত সকল শ্রেনীর মানুকে একতাবদ্ধ ভাবেই তার মোকাবিলা করতে হবে প্রয়াত কমরেড জসীমউদ্দীন মন্ডলের ভাষায় রুখে দাড়াতে হবে নাংলা পাঁচন হাতে অর্থাৎ শোষক শ্রেনী যেই ভাষায় কথা বলবে একই ভাষায় তার প্রত্যুত্তর দিতে হবে প্রয়োজনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে ৭১ এর মত আর একটি চুড়ান্ত মুক্তিযুদ্ধে কারন ৭১ সালে আমরা সব মানুষের জন্য একটি দেশ গড়তেই লড়াই করেছি তাই তো আমাদের সংবিধানে অন্যতম মূলনীতি হিসাবে সমাজতন্ত্রকে গ্রহন করা হয়েছিল আজ শোষক শ্রেনীর স্বার্থে কার্যত তা পরিত্যাক্ত। মুতরাং এই মুক্তির এলড়াইএ বিজয়ী হতেই হবে এর কোন বিকল্প বা শর্টকাট রাস্তা খোলা নেই। তবেই আসবে শোষনমূলক অমানবিক এই ধনিক শাষিত রক্তচোষা সমাজ ব্যাবস্হা থেকে স্হায়ী মুক্তি।